স্ট্রবেরি: বাংলাদেশে যেসব বিদেশি ফল চাষ শুরু হয়েছে এবং ইতোমধ্যে জনপ্রিয় হয়েছে সেগুলোর মধ্যে স্ট্রবেরি সবচেয়ে এগিয়ে। এর আদিনিবাস হিমালয় পর্বতমালার আশেপাশে মনে করা হয়। স্ট্রবেরি মূলত মৃদু শীতপ্রধান অঞ্চলের ফল। যেখানে শীতকাল মৃদুভাবাপন্ন ও গ্রীষ্মকাল শুষ্ক সেখানে এ ফল ভাল জন্মে। বর্তমানে উষ্ণমণ্ডলীয় জাত উদ্ভাবন হবার ফলে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সাফল্যজনকভাবে ফলটির চাষ হচ্ছে। বর্তমানে ইউরোপ, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান, উত্তর এশিয়া, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও আমেরিকায় ব্যাপক চাষ হয়।
স্ট্রবেরি একটি ক্ষুদ্রাকার লতাজাতীয় উদ্ভিদ। বারি থেকে অবমুক্ত জাত বারি স্ট্রবেরি-১। এছাড়া রাবি থেকে উদ্ভাবিত জাত রাবি-১, ২, ৩। লতা জাতীয় ছোট গাছ বলে সহজেই ছাদে, বসতবাড়ির উঠোনে বা মাঠে চাষ করা যায়। তবে লতার চারা থেকে ভাল ফলন পাওয়া যায় না। এজন্য এটি চাষের জন্য টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উত্পাদিত চারাই ব্যবহার করতে হবে।
ফলের স্বাদ হালকা মিষ্টি থেকে কিছুটা টক। এই ফলে প্রচুর ভিটামিন এ. বি-কমপ্লেক্স ও সি রয়েছে। এছাড়াও কিছু পরিমাণে ভিটামিন-ই, চর্বি এবং আমিষ থাকে। রোপণ সময় মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য অক্টোবর এবং ফল সংগ্রহ সময় ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। লাল রঙয়ের ছোট ছোট ফলগুলো গাছেই পাকাতে হবে। এজন্য পাখির উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে জাল দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এতে খরচ পড়বে বেশি। আবার পাকা ফল ১-২ দিনের বেশি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায় না।
সব সময় সূর্যের আলো পড়ে এমন জমি স্ট্রবেরি চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। মাটি সুনিষ্কাশিত হতে হবে। স্ট্রবেরি গাছ মোটেই জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। গ্রীষ্মকালে ফুল ও ফল ব্যাহত হয় এবং অতি বৃষ্টিতে এ গাছ সহজেই মারা যায়। বাংলাদেশে এ ফল চাষের এটাই প্রধান সমস্যা। আলু, মরিচ, টমেটো, বেগুন যে জমিতে চাষ করা হয় সে জমিতে স্ট্রবেরি চাষ না করাই ভাল।
প্রতি হেক্টর জমির জন্য ২০ থেকে ২৫ টন জৈব সার, ২০০ কেজি করে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার ব্যবহার করতে হবে। সারের মাত্রা বেশি হলে পাতার বৃদ্ধি বেশি হবে এবং ফুল ও ফল ধারণ ঠিকভাবে হবে না।
মাটি ঝুরঝুরে ও জো অবস্থায় চারা রোপণ করতে হবে। মাটির উপরের ১-২ ইঞ্চি জৈব সার দিলে ভাল হবে। পানি যেন জমে না থাকে, এজন্য উঁচু বেডে চারা লাগাতে হবে ও চারপাশে নালা রাখতে হবে। ৫০ থেকে ৬০ সেমি দূরে দূরে সারি করে চারা থেকে চারা ৪০ থেকে ৪৫ সেমি ব্যবধানে প্রতি বেডে ২ সারি করে চারা লাগাতে হবে।
মাটিতে রসের ঘাটতি হলেই পানি সেচ দিতে হবে। ফুল ধারণ ও ফল পুষ্ট হওয়ার সময় পানির ঘাটতি হলে ফলন অনেক কমে যাবে। আগাছা নিয়ন্ত্রণ ও ফলকে মাটির সংস্পর্শ থেকে রক্ষার জন্য মাটির উপর খড় বিছিয়ে দিতে হবে। ছাদে বা টবে চাষ করলেও ফল ধরার সময় গোড়ায় খড় বা কাগজ বিছিয়ে দিতে হবে।
আদ্রতা বেশি হলে পাতায় দাগ ও ফল পচা রোগ হতে দেখা যায়। নিয়ন্ত্রণের জন্য মাটিতে জলাবদ্ধতা হতে দেয়া উচিত নয়। আক্রান্ত পাতায় ডায়থেন এম-৪৫ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে সেপ্র করতে হবে এবং পচন ধরা ফল সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
একবার রোপণ করলে স্ট্রবেরি গাছ থেকে একবারই ফল সংগ্রহ করা যায়। আমাদের দেশে শীতের শুরুতে মধ্য সেপ্টেম্বর মাসে রোপণ করা গাছে ডিসেম্বর মাস থেকে ফুল আসা শুরু হয় ও ফল ধরতে থাকে। ফল প্রথমে সবুজ থাকে ও ধীরে ধীরে পুষ্ট হলে লালচে বর্ণ ধারণ করে। সংগ্রহের পর ১-২ দিন ফল ভাল থাকে। এর পর ফলে পচন ধরে। প্রতি ফলের ওজন প্রায় ১০ থেকে ১৫ গ্রাম হয়। আমাদের দেশে গাছপ্রতি ২০ থেকে ৩০টি ফল পাওয়া যায়। শেষ
No comments:
Post a Comment