মানিকগঞ্জের কৃষক সংগঠক এটিএম নুরুল হক বলেছেন, চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে
যে বরাদ্দ ছিল সে বরাদ্দটা ঠিক সময় সরকার বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ভর্তুকির
বড় একটি অংশ রয়ে গেছে। সেই অর্থ যদি আগামী বাজেটের সাথে যোগ করে দেয় এবং
শক্ত মনিটরিং-এর মাধ্যমে তা সঠিকভাবে ব্যয় করা হয় তাহলে কৃষক উপকৃত হবে।
বাজেটে কৃষি খাত কতটুকু মূল্যায়ন হয়েছে, এ প্রশ্নের জবাব নির্ভর করছে তার
বাস্তবায়নের ওপর, সরকারের সদ্বিচ্ছার ওপর। কৃষি খাতের সাথে সরকারের যে
অংশের সংশ্লিষ্টতা আছে তারা যদি উদ্যোগী হন তাহলে কৃষক উপকৃত হবেন। কৃষক
অনেক সময় অর্থনীতিবিদদের কথা শুনে হতাশ হয়ে যান। আবার হিসেববিহীন
প্রতিশ্রুতির কথা শুনে আশায় বুক বাঁধেন। আমি মনে করি, বেশি হতাশা ও বেশি
আশা দুই-ই কৃষকের জন্য খারাপ। কৃষক হিসেবে আমরা আশা করব, সরকার যা বলবে, তা
যেন কথার কথা না হয়, তা করে দেখাতে হবে। বাজেটে কী বরাদ্দ হল, সেখানে
কৃষকের খুব বেশি মাথাব্যথা নেই। সরকার কীভাবে কৃষি ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেয়ার
জন্য পরিকল্পনা নেবে, কৃষি কাজে কৃষককে সহযোগিতা করবে, সেটিই বড় কথা। কৃষি
কয়েকটা ভাগে বিভক্ত। যেমন পশুসম্পদ, মত্স্যসম্পদ, পোল্ট্রি খাত। পোল্ট্রি
খাতের অবস্থা আজ খুবই খারাপ। সরকার এই খাতটিকে আবারো দাঁড় করারনোর জন্য কী
ব্যবস্থা নিয়েছে তা বাজেট শুনে ও সাংবাদিকদের বিশ্লেষণ দেখে বোঝার উপায়
নেই। আমি দাবি করব, কৃষি ও তার সঙ্গের সবগুলো উত্পাদন খাত নিয়ে সরকার
গুরুত্বের সঙ্গে ভাববে।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনিস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষি বিশেষজ্ঞ রামেন্দ্র চৌধুরী বলেছেন, বাজেটের কৃষি খাতের প্রাপ্তি নিয়ে আলোচনার সময় এখানো আসেনি। বাজেট প্রস্তাবে আমরা শুধু একটা থোক বরাদ্দ দেখলাম ৭.৫ ভাগ। একটু জটিলতা আছে- বিভিন্ন পত্রিকায় পরিমাণটা বিভিন্ন রকমের দিয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন রকমের মন্তব্য করেছেন। যেমন একজন মন্তব্য করেছেন- কৃষিতে থোক বরাদ্দ কমেছে কিন্তু ভর্তুকি বেড়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভর্তুকি কমেছে। সুতরাং এটা যখন কৃষি মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় মিলে বিভিন্ন খাতে বন্টন ও বিভাজন করবে, তখন কথা বলার সময় আসবে। আর বাজেট ঘোষণার ঠিক পর পর এই সময়ে সরকারকে জানানো দরকার, আমরা কেমন বাজেট চাই। প্রথম কথা, গত বছর সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ছিল ভর্তুকি। আমি বলব- আমি কৃষিতে আরো বেশি ভর্তুকি চাই। শুনছি গতবারের ভর্তুকির তিন হাজার কোটি টাকা অব্যয়িত রয়ে গেছে। এ বছর পাঁচশ’ কোটি টাকা কমিয়ে ছয় হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু গতবারের তিন হাজার টাকা এটার সাথে যোগ করে বাস্তবায়িত করতে হবে। আর অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যাতে এই টাকাটা অব্যয়িত না থাকে। সরকারের একটি বিষয় পরিস্কার হওয়া প্রয়োজন, তা হল, কৃষিতে এক টাকা বিনিয়োগ করলে কৃষক তার কয়েকগুণ ফিরিয়ে দেয়। কৃষি মোট বাজেটের মাত্র ৭ দশমিক ৫ ভাগ বরাদ্দ পাচ্ছে, কিন্তু ফেরত দিচ্ছে জাতীয় আয়ের ২৪ ভাগের মতো। সেবা খাত মিলিয়ে কৃষকের এই দেয়ার হিসাবটা দাঁড়াবে ৪০ ভাগের ওপরে। তাহলে কৃষিতে বরাদ্দ বৃদ্ধির ব্যাপারে কুণ্ঠা থাকার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। দ্বিতীয়ত. কৃষি উন্নয়নের জন্য সরকারের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে কঠোর মনিটরিং -এর প্রয়োজন আছে। অন্য খাতের সঙ্গে এই খাতটির গুরুত্ব মেলানো ঠিক হবে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ইব্রাহিম খলিল বলেছেন, এবারের বাজেটে কৃষকদের উন্নয়নের কোনো দিক নির্দেশনা নেই। কৃষি খাতের বরাদ্দই বলে দেয়, কৃষকদেরকে আর্থিকভাবে এগিয়ে নেয়ার মত গুরুত্ব সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, এবারের বাজেটেও সরকার কৃষির প্রতি যথেষ্টই গুরুত্ব দিয়েছে। বরাদ্দের পরিমাণও খারাপ নয়। সরকার গত তিন বছরের বাজেটে বরাদ্দ, ভর্তুকি ও নির্দেশনার ক্ষেত্রে একটি ধারাবাহিকতা রেখে চলছে বলে আমি মনে করি। মত্স্য, পোল্ট্রিসহ গোটা প্রাণিসম্পদ খাতে বরাদ্দ বাড়েনি, তবে কমেছে তাও বলা যাবে না। একথা সত্য যে, আগামীর খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে কৃষি দিনের পর দিন চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে, তবে একথা সবাইকেই মানতে হবে যে, বাজেট দিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায় না। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, সুশাসন ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার। বাজেট সাধারণত প্রণীত হয় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায়। সে হিসেবে আগামী বাজেটে যে টাকা-পয়সাই বরাদ্দ থাক, তার সঠিক ব্যবহার এবং সর্বস্তরে সুশাসন নিশ্চিত করার ওপর কৃষি ও কৃষকের ভাগ্য নির্ধারন হবে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশ্লেষণ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র গবেষণা সহযোগী তৌফিক উল ইসলাম বলেছেন, কৃষিতে যা ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে। হয় ভর্তুকি বাড়াতে হবে, নতুবা ইউরিয়া ও নন ইউরিয়া সারের দাম অনেক বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যদিকে কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও বাজেটে কোনো দিক নির্দেশনা নেই। শস্যবীমার ব্যাপারেও তেমন কোনো ফলোআপ নেই। এছাড়া ফসল সংরক্ষণের জন্য যে গুদাম পরিধি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে সেদিক থেকেও কার্যত পিছিয়ে আছি আমরা। এক্ষেত্রে ২০১৩ সালের যে লক্ষ্য তারা দিয়েছে তা পূরণও অনেকটা অসম্ভব। অন্যদিকে মত্স্য, পোল্ট্রি কিংবা সামগ্রিক প্রাণিসম্পদ খাতেও আশাব্যঞ্জক কিছু নেই।
সর্বোপরি প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষিতে বরাদ্দ থাকলে প্রাণিসম্পদ খাতে কোথায় কত বরাদ্দ তার কোনো উল্লেখ নেই। পোল্ট্রি শিল্পের দুর্দিনে খামারিদের পাশে দাঁড়াতে হবে, মত্স্য ও দুগ্ধ শিল্পে নিতে হবে কার্যকর উদ্যোগ। পাশাপাশি কৃষি পণ্যে ন্যায্যমূল্য দিতে হবে এমনটাই প্রত্যাশা কৃষক ও বিশেষজ্ঞদের।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনিস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষি বিশেষজ্ঞ রামেন্দ্র চৌধুরী বলেছেন, বাজেটের কৃষি খাতের প্রাপ্তি নিয়ে আলোচনার সময় এখানো আসেনি। বাজেট প্রস্তাবে আমরা শুধু একটা থোক বরাদ্দ দেখলাম ৭.৫ ভাগ। একটু জটিলতা আছে- বিভিন্ন পত্রিকায় পরিমাণটা বিভিন্ন রকমের দিয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন রকমের মন্তব্য করেছেন। যেমন একজন মন্তব্য করেছেন- কৃষিতে থোক বরাদ্দ কমেছে কিন্তু ভর্তুকি বেড়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভর্তুকি কমেছে। সুতরাং এটা যখন কৃষি মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় মিলে বিভিন্ন খাতে বন্টন ও বিভাজন করবে, তখন কথা বলার সময় আসবে। আর বাজেট ঘোষণার ঠিক পর পর এই সময়ে সরকারকে জানানো দরকার, আমরা কেমন বাজেট চাই। প্রথম কথা, গত বছর সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ছিল ভর্তুকি। আমি বলব- আমি কৃষিতে আরো বেশি ভর্তুকি চাই। শুনছি গতবারের ভর্তুকির তিন হাজার কোটি টাকা অব্যয়িত রয়ে গেছে। এ বছর পাঁচশ’ কোটি টাকা কমিয়ে ছয় হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু গতবারের তিন হাজার টাকা এটার সাথে যোগ করে বাস্তবায়িত করতে হবে। আর অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যাতে এই টাকাটা অব্যয়িত না থাকে। সরকারের একটি বিষয় পরিস্কার হওয়া প্রয়োজন, তা হল, কৃষিতে এক টাকা বিনিয়োগ করলে কৃষক তার কয়েকগুণ ফিরিয়ে দেয়। কৃষি মোট বাজেটের মাত্র ৭ দশমিক ৫ ভাগ বরাদ্দ পাচ্ছে, কিন্তু ফেরত দিচ্ছে জাতীয় আয়ের ২৪ ভাগের মতো। সেবা খাত মিলিয়ে কৃষকের এই দেয়ার হিসাবটা দাঁড়াবে ৪০ ভাগের ওপরে। তাহলে কৃষিতে বরাদ্দ বৃদ্ধির ব্যাপারে কুণ্ঠা থাকার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। দ্বিতীয়ত. কৃষি উন্নয়নের জন্য সরকারের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে কঠোর মনিটরিং -এর প্রয়োজন আছে। অন্য খাতের সঙ্গে এই খাতটির গুরুত্ব মেলানো ঠিক হবে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ইব্রাহিম খলিল বলেছেন, এবারের বাজেটে কৃষকদের উন্নয়নের কোনো দিক নির্দেশনা নেই। কৃষি খাতের বরাদ্দই বলে দেয়, কৃষকদেরকে আর্থিকভাবে এগিয়ে নেয়ার মত গুরুত্ব সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, এবারের বাজেটেও সরকার কৃষির প্রতি যথেষ্টই গুরুত্ব দিয়েছে। বরাদ্দের পরিমাণও খারাপ নয়। সরকার গত তিন বছরের বাজেটে বরাদ্দ, ভর্তুকি ও নির্দেশনার ক্ষেত্রে একটি ধারাবাহিকতা রেখে চলছে বলে আমি মনে করি। মত্স্য, পোল্ট্রিসহ গোটা প্রাণিসম্পদ খাতে বরাদ্দ বাড়েনি, তবে কমেছে তাও বলা যাবে না। একথা সত্য যে, আগামীর খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে কৃষি দিনের পর দিন চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে, তবে একথা সবাইকেই মানতে হবে যে, বাজেট দিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায় না। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, সুশাসন ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার। বাজেট সাধারণত প্রণীত হয় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায়। সে হিসেবে আগামী বাজেটে যে টাকা-পয়সাই বরাদ্দ থাক, তার সঠিক ব্যবহার এবং সর্বস্তরে সুশাসন নিশ্চিত করার ওপর কৃষি ও কৃষকের ভাগ্য নির্ধারন হবে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশ্লেষণ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র গবেষণা সহযোগী তৌফিক উল ইসলাম বলেছেন, কৃষিতে যা ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে। হয় ভর্তুকি বাড়াতে হবে, নতুবা ইউরিয়া ও নন ইউরিয়া সারের দাম অনেক বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যদিকে কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও বাজেটে কোনো দিক নির্দেশনা নেই। শস্যবীমার ব্যাপারেও তেমন কোনো ফলোআপ নেই। এছাড়া ফসল সংরক্ষণের জন্য যে গুদাম পরিধি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে সেদিক থেকেও কার্যত পিছিয়ে আছি আমরা। এক্ষেত্রে ২০১৩ সালের যে লক্ষ্য তারা দিয়েছে তা পূরণও অনেকটা অসম্ভব। অন্যদিকে মত্স্য, পোল্ট্রি কিংবা সামগ্রিক প্রাণিসম্পদ খাতেও আশাব্যঞ্জক কিছু নেই।
সর্বোপরি প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষিতে বরাদ্দ থাকলে প্রাণিসম্পদ খাতে কোথায় কত বরাদ্দ তার কোনো উল্লেখ নেই। পোল্ট্রি শিল্পের দুর্দিনে খামারিদের পাশে দাঁড়াতে হবে, মত্স্য ও দুগ্ধ শিল্পে নিতে হবে কার্যকর উদ্যোগ। পাশাপাশি কৃষি পণ্যে ন্যায্যমূল্য দিতে হবে এমনটাই প্রত্যাশা কৃষক ও বিশেষজ্ঞদের।
No comments:
Post a Comment