Wednesday, June 13, 2012

আউশ-আমনের রোগ-বালাই

আমন রোপন মৌসুম আসন্ন। ইতিমধ্যে বীজতলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জেলার অনেক স্থানে বীজতলার চারা বেশ বড়ও হয়েছে। বৃষ্টিহীনতার কারনে অনেক চাষী আউশ রোপণ করতে পারেননি। তবে গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাত হতে শুরু করেছে। আগামীতে আরো বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। আমন চাষ বৃষ্টি নির্ভর হওয়ায় উৎপাদন খরচ কম বিধায় চাষীরা আমন মৌসুমকে বেশ একটা গুরুত্ব দেন না। কিন্তু আমাদের চাই তিন মৌসুমেই সমান ফলন। আমনের ফলন স্বাভাবিক রাখতে এর রোগবালাই প্রতিরোধ করা অতি জরুরী। কেননা নানা রোগের আক্রমনের ফলে আমন ধানের ৩০ ভাগ ফলন থেকে বঞ্চিত হয় কৃষক। আমন মৌসুমে নানা রোগ-বালাইর আক্রমন ঘটে। তবে সময়মতো রোগ নির্ণয় করতে না পারার কারণে ৩০ ভাগ ফসল বিনষ্ট হয়। কৃষকের অজ্ঞতা বশত ধানে নানা প্রকার রোগের আক্রমন ঘটে। রোগাক্রান্ত ধান ক্ষেতের ফলন কখনও আংশিক আবার কখনও সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়। তবে রোগের কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার ব্যবস্থপানা জানা থাকলে কৃষক নিজেই তার ক্ষেতের রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। নিচে ধানের নানা রোগ, সনাক্তকরণ, এবং প্রতিকার ব্যবস্থাপনা উল্লেখ করা হলো। টুংরোঃ এ রোগ আউশ এবং আমন মৌসুমে অর্থাৎ মে-অক্টোবর মাসের যে কোন সময় আক্রমন করতে পারে। ধানের কুশি এবং ফল অবস্থায় সাধারণত টুংরো রোগ হয়। ধান ক্ষেতে টুংরো রোগ হলে গাছ ছোট হয়ে যায় বা বসে যায়। পাতহা হলদে, কমলা বা কচি পাতা কুকড়ে যায়। ব্ল¬াষ্টঃ বোরো, রোপা আমন ও আউশ ধানে সাধারণত এ রোগ হয়। মার্চ থেকে নভেম্বর মাসে ধান ক্ষেতে এ রোগ আক্রমন করে। আক্রান্তের মাত্রা ক্ষতির সীমা ছাড়িয়ে গেলে ক্ষেতের ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়। স্বভাবিক আক্রমনে ৩০ থেকে ৭০ ভাগ ফসল বিনষ্ট করতে সক্ষম। এ রোগ সাধারণত ধানের পাতা, গিট এবং শীষে আক্রমন করে। পাতায় আক্রমন হলে পাতা সাদা, ছাই রঙা বা বাদামী রঙের হয়ে যায়। গিটে আক্রমন হলে গিট কালো হয়ে পচে যায় এবং গিট থেকে ধান কনে পড়ে। শীষে আক্রমন হলে শীষ বা শীষের শাখা-প্রশাখার গোড়া কালো হয়ে শুকিয়ে ঝরে পড়ে। খোল পোড়াঃ আউশ এবং আমন ধানে সাধারণত এ রোগ হয়। মে, নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে এ রোগ ধান ক্ষেতে আক্রমন করে। এ রোগ সাধারণত কুশি অবস্থায় ধান ক্ষেতে আক্রমন করে। এ রোগের আক্রমন হলে ধানের খোলে জলছাপের মতো দাগ পড়ে, গোখরা সাপের চামড়ার মতো দেখায়। এ রোগের আক্রমন হলে ধানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বিঘ্নিত হয়। ফলন হ্রাস পায়। পাতা পোড়াঃ আউশ, আমন এবং বোরো ধানে এ রোগ হয়। মে, মধ্য আগষ্ট-সেপ্টেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসের যে কোন সময় এ রোগ ক্ষেতে আক্রমন করতে পারে। পাতা পোড়া রোগ সাধারণত চারা ও কুশি অবস্থায় ক্ষেতে আক্রমন করে। পাতা পোড়া রোগে ধান আক্রান্ত হলে পাতা ও কুশি সম্পূর্ন পচে যায় এবং গন্ধ বের হয়। আবার পাতার অগ্রভাগ থেকে কিনারা দিয়ে পাতা শুকিয়ে খড়ের মতো হয়ে যায়। উফরাঃ আমন ধানের অন্যতম রোগ উফরা। সাধারণত অক্টোবর মাসে এ রোগের প্রদুর্ভাব গটে। এ রোগ ধানের যে কোন অবস্থায় ক্ষেতে আক্রমন করতে পারে। এ রোগের আক্রমন হলে ধানের গাছ ছোট হয়ে যায়। পাতা ও খোলের সংযোগ স্থলে বাদামী দাগ পড়ে, পাতা শুকিয়ে যায়, ধানের কুশি সম্পূর্ণ বের হতে পারে না আংশিক বের হয় আবার কখনও শুকিয়ে যায়।
প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনাঃ ধানের ক্ষেতে নানা রোগ বালাই যেমন সহজেই আক্রমন করে অনুরুপ খুব সহজেই এসব রোগ প্রতিরোধ করা যায়। উপরোল্লি¬খিত রোগ প্রতিরোধ করতে জমিতে সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। আক্রান্ত ফসলী জমিতে ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। জমিতে স্বভাবিক পানি ধরে রাখতে হবে। বীজ শোধন করে নিলে রোগের আক্রমন কম হয়। আক্রান্ত ক্ষেতের রোগ দমনের জন্য ১০ লিটার পানিতে ১০ গ্রাম কপার অক্সিক্লোরাইড মিশিয়ে প্রতি আড়াই শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া আক্রান্ত ক্ষেতে হেক্টর প্রতি ৮০০ মিলি হিনোসান বা আড়াই কেজি হোমাই বা টপসিন এম প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া যেতে পারে। জমি চাষ কালে ক্ষেতে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। স্থানীয় জাতের তুলনায় উচ্চফলনশীল বা হাইব্রিড বীজের রোগ-বালাই বেশি হয়। তবে এ সব রোগ প্রতিরোধের জন্য সুষম সার ব্যবহারের পাশাপাশি জৈব সার ব্যবহার করে, জমিতে বছরে যে কোন সময় স্বল্পকালের জন্য ধৈনচা চাষ করে রোগ বালাই’র আক্রমন প্রতিহত করা যায়, এবং রোগমুক্ত বীজ বাছাই পূর্বক চাষ করলে সব ধরনের রোগ দুর করা যায়। (তথ্যসুত্র-বাংলাদেশ পরমানু/কৃষি গবেষণা ইন. ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া)

No comments:

Post a Comment