Sunday, June 17, 2012

নারিকেল চাষে নিতে হবে বাণিজ্যিক উদ্যোগ

মৌলভীবাজারে বেড়ে গেছে নারিকেলের চাহিদা আর এ সুযোগে বাজারে বেড়ে গেছে এর দামও। তবে মৌলভীবাজারের মাটি বাণিজ্যিকভাবে নারিকেল চাষের অনুকূলে না থাকলেও এ এলাকায় বেড়েছে নারিকেলের উত্পাদন। জেলার মোট চাহিদার অর্ধেকের উপরে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন বসত-বাড়ির আঙিনা থেকেই পূরণ হচ্ছে। একই সাথে গরমে পানীয় হিসেবে ডাবের পানির শতভাগ চাহিদা এ জেলার উত্পাদন দিয়েই পূরণ হয়। বর্তমানে বাজারে নারিকেলের দাম অনেকটা বেড়ে গেছে। প্রতি জোড়া নারিকেলের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আর প্রতিটি ডাবের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা। এ ভাবে জেলার ৭ উপজেলার বাড়ি ঘর থেকে বছরে ৭ থেকে ৮ কোটি টাকার নারিকেল বিক্রি হয়, যা এ জেলার পরিবারগুলোর অতিরিক্ত আয়। আর এটি যদি সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক মনোভাবে করা হয়  তাহলে বছরে নারিকেল বিক্রি করে এ জেলাবাসী আয় করবে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা। আর জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর আগামীতে যাতে নারিকেল চাষে যত্নবান হন সে লক্ষ্যে শুধু নারিকেলের জন্য উদ্বুদ্ধকরণ সভাসহ নিয়মিত পরামর্শ প্রদান আরো জোরদার করবে বলে জানায়।
জেলার পাহাড়ি ও সমতল প্রায় সব গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই দুই তিনটি করে নারিকেল গাছ রয়েছে, যা পরিবারের চাহিদা পূরণের পর তারা বাজারে বিক্রি করে দেন। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে বেশ কিছু কৃষক তাদের বাড়ির নারিকেল বিক্রি করে বছরে ৫০ থেকে এক লক্ষ টাকা আয় করেন। এদের মধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুর খান ইউনিয়নের মন্দীর গাঁওয়ের মৌলানা মো. মুজিবুর রহমান আল মাদারী একজন। তাদের বাড়ির শতাধিক নারিকেল গাছ থেকে বছরে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার নারিকেল বিক্রি হয়। তবে এ এলাকায় বিশেষ করে নারিকেল বিক্রির টাকা পেয়ে থাকেন গৃহকর্তরা। অনেক বিত্তবান পরিবারের গৃহকর্তারাও নারিকেল ও ডাব বিক্রি করেন। তবে এ এলাকার গৃহস্থদের নারিকেলের উত্পাদনের বাণিজ্যিক মন-মানসিকতা না থাকায় এ জেলা উত্পাদনের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। কিন্তু তারা যদি একটু যত্নবান হয়ে নারিকেল গাছ লাগান এবং যত্ন নেন তাহলে এ এলাকার শতভাগ চাহিদা পূরণ করে জেলার বাইরেও বিক্রি করা যাবে বলে জানালেন জেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে নারিকেলের চাষ হচ্ছে যা থেকে বছরে উত্পাদন হয় ৮৯ হাজার মেট্রিক টন। সামান্য যত্নে বছরে একটি নারিকেল গাছে ৬০ থেকে ৭০টি নারিকেল ধরে। আর সঠিক যত্ন নিলে তা ১০০ ছাড়িয়ে যায়। একটি পরিবারে ৫/৬টি নারিকেল গাছ থাকলে নিজের চাহিদা পূরণ করে বছরে অতিরিক্ত ১০/১৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আর একটি নারিকেল গাছ বাড়িতে কোনো রকমে টিকে গেলে এটি এক নাগারে ৭০/৮০ বছর ফল দিয়ে থাকে। যার উপকার পেতে পারেন তিন পুরুষ।
নারকেলের রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার ও ভেষজ গুণাগুণ। ডাবের পানিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসসহ একাধিক পুষ্টি গুণ। নারিকেলের শাঁশ দিয়ে বাঙালি নারীরা নানা রকমের মুখরোচক খাবার তৈরি করে থাকেন। এছাড়া নারিকেলের তেল চুলের জন্য মহৌষধ। এটি শুধু চুল নয় আমাদের ত্বককেও ভাল রাখে। অনেক দেশে নারিকেলের তেল রান্নায়ও ব্যবহার হয়।
নারিকেল গাছ সাধারণত ৮ থেকে ১০ মিটার দূরত্বে লাগাতে হয়। তবে অবশ্যই ৬ মিটারের কম হলে গাছ বাঁচানো কষ্টকর। নারিকেলের বেটে প্রজাতির গাছ ৬ মিটারের মধ্যে হলে সমস্যা হয় না । গাছ রোপণের ক্ষেত্রে যত কমবয়সী চারা হয় ততই ভাল।
নারিকেলের চারা রোপণের উত্তম সময় মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এর জন্য এক মিটার চওড়া ও এক মিটার গর্ত করে গর্ত থেকে উঠানো মাটিতে সার মিশিয়ে ৮/১০দিন রেখে রোদে শুকাতে হবে। পরে মাটির উপরিভাগ থেকে ১০ থেকে ১২ সেন্টি মিটারের নিচে চারা লাগাতে হবে। এসময় একটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে নারিকেলের উপরের অংশ কিছুটা যেন খোলা থাকে। বিশেষ করে বর্ষায় এর গোড়ায় যেন পানি জমতে না পারে।
নারিকেলে পটাশ জাতীয় সারের অভাবে ফুল দেরীতে আসে, অনেক সময় ফল ঝড়ে যায় এবং দেখা দেয় রোগ-বালাই। এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল কৃষি কর্মকর্তা সুকল্প দাশ জানান, শুকনো মৌসুমে কম বয়সে নারিকেল গাছে ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর পানি দিতে হয়। গাছ রোপণের ৫/৬ বছর পর থেকেই ফল আসতে শুরু করে। আর পূর্ণাঙ্গ বয়সে বছরে দুই বার সার দিলে ও নিয়মিত পরিচর্যা করলে এক একটি গাছে বছরে একশ’র উপরে ফল পাওযা যায়।
সবুজবাগ এলাকার গৌরাঙ্গ চক্রবর্ত্তী, প্রতাপ চন্দ, প্রণথ দাশ, দুলাল পাল ও কুহিনুর চৌধুরী জানান, নারকিল চাষ করে তারা নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর বছরে কয়েক হাজার টাকার নারিকেল বিক্রি করে থাকেন।
কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক আব্দুল জলিল মিয়া জানান, এই জেলায় প্রচুর প্ররিমাণে নারিকেল গাছ রয়েছে। কৃষকদের ডাকে তারা নারিকেল গাছের রোপণ প্রণালী ও পরিচর্যার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এর জন্য সরকারের আলাদা কোনো বাজেট নেই। বাজেট থাকলে নারিকেল গাছ ছাটাই ও পাড়ার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণে ব্যবস্থা করলে কৃষকরা আরো উপকৃত হত।
 

No comments:

Post a Comment