Sunday, June 17, 2012

গ্যানোডার্মা মাশরুমের চাষ ব্যবস্থাপনা







গ্যানোডার্মা মাশরুম বিশ্বে অমরত্বের মাশরুম নামে পরিচিত। বিশেষ করে চীন, জাপান কোরিয়া ও মালয়েশিয়াতে হার্বাল মেডিসিন হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। ক্যান্সার, এইডস, হূদরোগের মত বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগের নিয়ন্ত্রণে গ্যানোডার্মা মাশরুমের কদর রয়েছে। জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সমপ্রসারণ কেন্দ্র কর্তৃক উত্পাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন হওয়ায় ৭টি আবাদযোগ্য জাত রয়েছে যা বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ায় চাষ উপযোগী। বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ শুরু হয়েছে।
গ্যানোডার্মার বীজ উত্পাদন: মাশরুমের অঙ্গজ বীজ অর্থাত্ স্পন তৈরির জন্য প্রধান উপাদান  হিসেবে কাঠের গুঁড়ো, আখের ছোবরা, ভুট্টার খড় ব্যবহার করা যায়, এর সাথে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে গমের ভূষি, চালের কুঁড়া, ভুট্টার গুঁড়ো প্রভৃতি ব্যবহার করা যায়।
জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সমপ্রসারণ কেন্দ্র  কাঠের গুঁড়ো, গমের ভূষি ও চালের কুঁড়া দিয়ে অত্যন্ত সহজে স্পন তৈরি করছে যাতে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
সাবস্ট্রেট ফরমুলেশন ও স্পন তৈরি: ফরমুলেশন-১: কাঠের গুঁড়ো- ৭০%, গমের ভূষি-২৫%, ধানের তুষ-০৫%, ক্যালসিয়াম কার্বনেট-০.২%, পানি- ৫০ থেকে ৬০%।
ফরমুলেশন-২: কাঠের গুঁড়ো- ৭০%, চালের কুঁড়া ২২.৫%, ধানের তুষ-২.৫%, ক্যালসিয়াম কার্বনেট-০.২%, পানি- ৫০ থেকে ৬০%। উল্লেখিত উপাদানগুলো ভালভাবে মিশিয়ে পিপি ব্যাগে ১ কেজি অথবা আধা কেজি
করে ভরে প্লাস্টিক নেক দিয়ে বেঁধে কাঠের কীলক দ্বারা প্যাকেটের মুখে গর্ত করে দিতে হবে। এরপর কটনপ্লাগ দিয়ে মুখ বন্ধ করে ব্রাউন পেপার এবং রাবার ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। এরপর অটোক্লেভ মেশিনে ১২০০ সে. তাপমাত্রায় ১.৫ কেজি/ঘন ইঞ্চি বাষ্প চাপে ২ ঘণ্টা রেখে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। প্যাকেট ঠাণ্ডা হলে ল্যাবরেটরিতে ক্লিনবেঞ্চে জীবাণুমুক্ত অবস্থায় মাদার কালচার  দিয়ে উক্ত প্যাকেটে ইনোকুলেশন করতে হবে। ইনোকুলেশনকৃত প্যাকেটগুলোকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন অন্ধকার ঘরে ২৮ থেকে ৩৫০ সে. তাপমাত্রায় মাইসেলিয়াল কলোনাইজেশনের জন্য রেখে দিতে হবে। এভাবে ২০
থেকে ২৫ দিন রাখার পর মাইসেলিয়াম দ্বারা প্যাকেট পূর্ণ হবে যা পরবর্তীতে চাষ ঘরে ব্যবহূত হবে।
প্যাকেট কাটা: গ্যানোডার্মা মাশরুমের স্পন প্যাকেট বিভিন্নভাবে কাটা যায়। চাষ ঘরে প্যাকেট বসানোর আগে মাইসেলিয়াম পূর্ণ স্পন প্যাকেট হতে নেক, তুলা, ব্রাউন পেপার ইত্যাদি খুলে প্যাকেটের মুখ রাবার ব্যান্ড দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে। কোণাযুক্ত প্যাকেটের একপাশে মাঝ বরাবর এক বর্গ সে.মি. আকারে পিপি কেটে ব্লেড দিয়ে সাদা অংশ চেঁছে ফেলতে হবে। এরপর চাষ ঘরের তাকে সারি সারি করে বসিয়ে দিতে হবে। স্পন প্যাকেট হতে নেক, তুলা, ব্রাউন পেপার ইত্যাদি খুলে প্যাকেটের মুখ খোলা রেখে দিয়েও মাশরুম চাষ করা যায়। চাষ ঘরের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের কৌশল থাকলে স্পন প্যাকেটের উপরের পুরো মুখ খুলে দিয়ে ও মাশরুম চাষ করা যেতে পারে।
পরিচর্যা: প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য দিনে ৩ থেকে ৪ বার মৃদু পানি সেপ্র করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কোনো অবস্থায় আর্দ্রতার পরিমাণ কমে না যায়। এভাবে পরিচর্যা করলে ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই সাদা শক্ত মাসরুমের কুড়ি , ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে আঙুলেরমত লম্বা হয়ে লালচে বর্ণের এবং ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে অগ্রভাগ হাতের তালুরমত চ্যাপ্টাকৃতি ধারণ করবে। এই অবস্থায় চাষ ঘরের আলো ও বায়ু চলাচল বাড়িয়ে দিতে হবে।
মাশরুম সংগ্রহ: ঘরে বসানোর দের মাসের মধ্যেই মাশরুম সংগ্রহ করা যায়। পরিপক্ক ফ্রুটিং বডি সংগ্রহের উপযোগী লক্ষণ হল মাসরুমের কিনারার বৃদ্ধি থেমে গিয়ে চকচকে লাল বর্ণ ধারণ করে এবং অসংখ্য লালচে স্পোর নিচে পরতে দেখা যায়। পরিপক্ক ফ্রুটিং বডি তুলে নেওয়ার পরে প্যাকেটের কাটা স্থানে একটু চেঁছে দিলে খুব দ্রুত দ্বিতীয় বার ফলন পাওয়া যায়। এভাবে নিয়মিত পরিচর্যা করলে প্রতি প্যাকেট হতে ৩ থেকে ৪ বার ফলন পাওয়া সম্ভব। প্রতি কেজি স্পন থেকে ৭০ থেকে ৯০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যায়।
সংরক্ষণ: গ্যানোডার্মা মাশরুম সংগ্রহ করে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে রোদে শুকাতে হবে। এরপর পিপি ব্যাগে বা বোতলে ভরে বায়ুরোধী অবস্থায় ২ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এছাড়া স্লাইস বা পাউডার করেও অনেক দিন রাখা যায়। ৩.০-৩.৫ কেজি তাজা মাশরুম শুকালে ১ কেজি শুকনো ঋষি মাশরুম পাওয়া যায়।
ব্যবহার: মাশরুম পাউডার করে বা স্লাাইস করে কেটে পানিতে মৃদু তাপে জ্বাল দিয়ে মাশরুমের নির্জাস বের করে লেবুর রসসহ গরম-গরম অথবা ঠাণ্ডা করে খাওয়া যায়।
 

নারিকেল চাষে নিতে হবে বাণিজ্যিক উদ্যোগ

মৌলভীবাজারে বেড়ে গেছে নারিকেলের চাহিদা আর এ সুযোগে বাজারে বেড়ে গেছে এর দামও। তবে মৌলভীবাজারের মাটি বাণিজ্যিকভাবে নারিকেল চাষের অনুকূলে না থাকলেও এ এলাকায় বেড়েছে নারিকেলের উত্পাদন। জেলার মোট চাহিদার অর্ধেকের উপরে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন বসত-বাড়ির আঙিনা থেকেই পূরণ হচ্ছে। একই সাথে গরমে পানীয় হিসেবে ডাবের পানির শতভাগ চাহিদা এ জেলার উত্পাদন দিয়েই পূরণ হয়। বর্তমানে বাজারে নারিকেলের দাম অনেকটা বেড়ে গেছে। প্রতি জোড়া নারিকেলের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আর প্রতিটি ডাবের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা। এ ভাবে জেলার ৭ উপজেলার বাড়ি ঘর থেকে বছরে ৭ থেকে ৮ কোটি টাকার নারিকেল বিক্রি হয়, যা এ জেলার পরিবারগুলোর অতিরিক্ত আয়। আর এটি যদি সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক মনোভাবে করা হয়  তাহলে বছরে নারিকেল বিক্রি করে এ জেলাবাসী আয় করবে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা। আর জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর আগামীতে যাতে নারিকেল চাষে যত্নবান হন সে লক্ষ্যে শুধু নারিকেলের জন্য উদ্বুদ্ধকরণ সভাসহ নিয়মিত পরামর্শ প্রদান আরো জোরদার করবে বলে জানায়।
জেলার পাহাড়ি ও সমতল প্রায় সব গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই দুই তিনটি করে নারিকেল গাছ রয়েছে, যা পরিবারের চাহিদা পূরণের পর তারা বাজারে বিক্রি করে দেন। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে বেশ কিছু কৃষক তাদের বাড়ির নারিকেল বিক্রি করে বছরে ৫০ থেকে এক লক্ষ টাকা আয় করেন। এদের মধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুর খান ইউনিয়নের মন্দীর গাঁওয়ের মৌলানা মো. মুজিবুর রহমান আল মাদারী একজন। তাদের বাড়ির শতাধিক নারিকেল গাছ থেকে বছরে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার নারিকেল বিক্রি হয়। তবে এ এলাকায় বিশেষ করে নারিকেল বিক্রির টাকা পেয়ে থাকেন গৃহকর্তরা। অনেক বিত্তবান পরিবারের গৃহকর্তারাও নারিকেল ও ডাব বিক্রি করেন। তবে এ এলাকার গৃহস্থদের নারিকেলের উত্পাদনের বাণিজ্যিক মন-মানসিকতা না থাকায় এ জেলা উত্পাদনের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। কিন্তু তারা যদি একটু যত্নবান হয়ে নারিকেল গাছ লাগান এবং যত্ন নেন তাহলে এ এলাকার শতভাগ চাহিদা পূরণ করে জেলার বাইরেও বিক্রি করা যাবে বলে জানালেন জেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে নারিকেলের চাষ হচ্ছে যা থেকে বছরে উত্পাদন হয় ৮৯ হাজার মেট্রিক টন। সামান্য যত্নে বছরে একটি নারিকেল গাছে ৬০ থেকে ৭০টি নারিকেল ধরে। আর সঠিক যত্ন নিলে তা ১০০ ছাড়িয়ে যায়। একটি পরিবারে ৫/৬টি নারিকেল গাছ থাকলে নিজের চাহিদা পূরণ করে বছরে অতিরিক্ত ১০/১৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আর একটি নারিকেল গাছ বাড়িতে কোনো রকমে টিকে গেলে এটি এক নাগারে ৭০/৮০ বছর ফল দিয়ে থাকে। যার উপকার পেতে পারেন তিন পুরুষ।
নারকেলের রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার ও ভেষজ গুণাগুণ। ডাবের পানিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসসহ একাধিক পুষ্টি গুণ। নারিকেলের শাঁশ দিয়ে বাঙালি নারীরা নানা রকমের মুখরোচক খাবার তৈরি করে থাকেন। এছাড়া নারিকেলের তেল চুলের জন্য মহৌষধ। এটি শুধু চুল নয় আমাদের ত্বককেও ভাল রাখে। অনেক দেশে নারিকেলের তেল রান্নায়ও ব্যবহার হয়।
নারিকেল গাছ সাধারণত ৮ থেকে ১০ মিটার দূরত্বে লাগাতে হয়। তবে অবশ্যই ৬ মিটারের কম হলে গাছ বাঁচানো কষ্টকর। নারিকেলের বেটে প্রজাতির গাছ ৬ মিটারের মধ্যে হলে সমস্যা হয় না । গাছ রোপণের ক্ষেত্রে যত কমবয়সী চারা হয় ততই ভাল।
নারিকেলের চারা রোপণের উত্তম সময় মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এর জন্য এক মিটার চওড়া ও এক মিটার গর্ত করে গর্ত থেকে উঠানো মাটিতে সার মিশিয়ে ৮/১০দিন রেখে রোদে শুকাতে হবে। পরে মাটির উপরিভাগ থেকে ১০ থেকে ১২ সেন্টি মিটারের নিচে চারা লাগাতে হবে। এসময় একটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে নারিকেলের উপরের অংশ কিছুটা যেন খোলা থাকে। বিশেষ করে বর্ষায় এর গোড়ায় যেন পানি জমতে না পারে।
নারিকেলে পটাশ জাতীয় সারের অভাবে ফুল দেরীতে আসে, অনেক সময় ফল ঝড়ে যায় এবং দেখা দেয় রোগ-বালাই। এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল কৃষি কর্মকর্তা সুকল্প দাশ জানান, শুকনো মৌসুমে কম বয়সে নারিকেল গাছে ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর পানি দিতে হয়। গাছ রোপণের ৫/৬ বছর পর থেকেই ফল আসতে শুরু করে। আর পূর্ণাঙ্গ বয়সে বছরে দুই বার সার দিলে ও নিয়মিত পরিচর্যা করলে এক একটি গাছে বছরে একশ’র উপরে ফল পাওযা যায়।
সবুজবাগ এলাকার গৌরাঙ্গ চক্রবর্ত্তী, প্রতাপ চন্দ, প্রণথ দাশ, দুলাল পাল ও কুহিনুর চৌধুরী জানান, নারকিল চাষ করে তারা নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর বছরে কয়েক হাজার টাকার নারিকেল বিক্রি করে থাকেন।
কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক আব্দুল জলিল মিয়া জানান, এই জেলায় প্রচুর প্ররিমাণে নারিকেল গাছ রয়েছে। কৃষকদের ডাকে তারা নারিকেল গাছের রোপণ প্রণালী ও পরিচর্যার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এর জন্য সরকারের আলাদা কোনো বাজেট নেই। বাজেট থাকলে নারিকেল গাছ ছাটাই ও পাড়ার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণে ব্যবস্থা করলে কৃষকরা আরো উপকৃত হত।
 

কৃষি বাজেট নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

মানিকগঞ্জের কৃষক সংগঠক এটিএম নুরুল হক বলেছেন, চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে যে বরাদ্দ ছিল সে বরাদ্দটা ঠিক সময় সরকার বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ভর্তুকির বড় একটি অংশ রয়ে গেছে। সেই অর্থ যদি আগামী বাজেটের সাথে যোগ করে দেয় এবং শক্ত মনিটরিং-এর মাধ্যমে তা সঠিকভাবে ব্যয় করা হয় তাহলে কৃষক উপকৃত হবে। বাজেটে কৃষি খাত কতটুকু মূল্যায়ন হয়েছে, এ প্রশ্নের জবাব নির্ভর করছে তার বাস্তবায়নের ওপর, সরকারের সদ্বিচ্ছার ওপর। কৃষি খাতের সাথে সরকারের যে অংশের সংশ্লিষ্টতা আছে তারা যদি উদ্যোগী হন তাহলে কৃষক উপকৃত হবেন। কৃষক অনেক সময় অর্থনীতিবিদদের কথা শুনে হতাশ হয়ে যান। আবার হিসেববিহীন প্রতিশ্রুতির কথা শুনে আশায় বুক বাঁধেন। আমি মনে করি, বেশি হতাশা ও বেশি আশা দুই-ই কৃষকের জন্য খারাপ। কৃষক হিসেবে আমরা আশা করব, সরকার যা বলবে, তা যেন কথার কথা না হয়, তা করে দেখাতে হবে। বাজেটে কী বরাদ্দ হল, সেখানে কৃষকের খুব বেশি মাথাব্যথা নেই। সরকার কীভাবে কৃষি ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য পরিকল্পনা নেবে, কৃষি কাজে কৃষককে সহযোগিতা করবে, সেটিই বড় কথা। কৃষি কয়েকটা ভাগে বিভক্ত। যেমন পশুসম্পদ, মত্স্যসম্পদ, পোল্ট্রি খাত। পোল্ট্রি খাতের অবস্থা আজ খুবই খারাপ। সরকার এই খাতটিকে আবারো দাঁড় করারনোর জন্য কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা বাজেট শুনে ও সাংবাদিকদের বিশ্লেষণ দেখে বোঝার উপায় নেই। আমি দাবি করব, কৃষি ও তার সঙ্গের সবগুলো উত্পাদন খাত নিয়ে সরকার গুরুত্বের সঙ্গে ভাববে।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনিস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষি বিশেষজ্ঞ রামেন্দ্র চৌধুরী বলেছেন, বাজেটের কৃষি খাতের প্রাপ্তি নিয়ে আলোচনার সময় এখানো আসেনি। বাজেট প্রস্তাবে আমরা শুধু একটা থোক বরাদ্দ দেখলাম ৭.৫ ভাগ। একটু জটিলতা আছে- বিভিন্ন পত্রিকায় পরিমাণটা বিভিন্ন রকমের দিয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন রকমের মন্তব্য করেছেন। যেমন একজন মন্তব্য করেছেন- কৃষিতে থোক বরাদ্দ কমেছে কিন্তু ভর্তুকি বেড়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভর্তুকি কমেছে। সুতরাং এটা যখন কৃষি মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় মিলে বিভিন্ন খাতে বন্টন ও বিভাজন করবে, তখন কথা বলার সময় আসবে। আর বাজেট ঘোষণার ঠিক পর পর এই সময়ে সরকারকে জানানো দরকার, আমরা কেমন বাজেট চাই। প্রথম কথা, গত বছর সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ছিল ভর্তুকি। আমি বলব- আমি কৃষিতে আরো বেশি ভর্তুকি চাই। শুনছি গতবারের ভর্তুকির তিন হাজার কোটি টাকা অব্যয়িত রয়ে গেছে। এ বছর পাঁচশ’ কোটি টাকা কমিয়ে ছয় হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু গতবারের তিন হাজার টাকা এটার সাথে যোগ করে বাস্তবায়িত করতে হবে। আর অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যাতে এই টাকাটা অব্যয়িত না থাকে। সরকারের একটি বিষয় পরিস্কার হওয়া প্রয়োজন, তা হল, কৃষিতে এক টাকা বিনিয়োগ করলে কৃষক তার কয়েকগুণ ফিরিয়ে দেয়। কৃষি মোট বাজেটের মাত্র ৭ দশমিক ৫ ভাগ বরাদ্দ পাচ্ছে, কিন্তু ফেরত দিচ্ছে জাতীয় আয়ের ২৪ ভাগের মতো। সেবা খাত মিলিয়ে কৃষকের এই দেয়ার হিসাবটা দাঁড়াবে ৪০ ভাগের ওপরে। তাহলে কৃষিতে বরাদ্দ বৃদ্ধির ব্যাপারে কুণ্ঠা থাকার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। দ্বিতীয়ত. কৃষি উন্নয়নের জন্য সরকারের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে কঠোর মনিটরিং -এর প্রয়োজন আছে। অন্য খাতের সঙ্গে এই খাতটির গুরুত্ব মেলানো ঠিক হবে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ইব্রাহিম খলিল বলেছেন, এবারের বাজেটে কৃষকদের উন্নয়নের কোনো দিক নির্দেশনা নেই। কৃষি খাতের বরাদ্দই বলে দেয়, কৃষকদেরকে আর্থিকভাবে এগিয়ে নেয়ার মত গুরুত্ব সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, এবারের বাজেটেও সরকার কৃষির প্রতি যথেষ্টই গুরুত্ব দিয়েছে। বরাদ্দের পরিমাণও খারাপ নয়। সরকার গত তিন বছরের বাজেটে বরাদ্দ, ভর্তুকি ও নির্দেশনার ক্ষেত্রে একটি ধারাবাহিকতা রেখে চলছে বলে আমি মনে করি। মত্স্য, পোল্ট্রিসহ গোটা প্রাণিসম্পদ খাতে বরাদ্দ বাড়েনি, তবে কমেছে তাও বলা যাবে না। একথা সত্য যে, আগামীর খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে কৃষি দিনের পর দিন চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে, তবে একথা সবাইকেই মানতে হবে যে, বাজেট দিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায় না। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, সুশাসন ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার। বাজেট সাধারণত প্রণীত হয় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায়। সে হিসেবে আগামী বাজেটে যে টাকা-পয়সাই বরাদ্দ থাক, তার সঠিক ব্যবহার এবং  সর্বস্তরে সুশাসন নিশ্চিত করার ওপর কৃষি ও কৃষকের ভাগ্য নির্ধারন হবে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশ্লেষণ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র গবেষণা সহযোগী তৌফিক উল ইসলাম বলেছেন, কৃষিতে যা ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে। হয় ভর্তুকি বাড়াতে হবে, নতুবা ইউরিয়া ও নন ইউরিয়া সারের দাম অনেক বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যদিকে কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও বাজেটে কোনো দিক নির্দেশনা নেই। শস্যবীমার ব্যাপারেও তেমন কোনো ফলোআপ নেই। এছাড়া ফসল সংরক্ষণের জন্য যে গুদাম পরিধি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে সেদিক থেকেও কার্যত পিছিয়ে আছি আমরা। এক্ষেত্রে ২০১৩ সালের যে লক্ষ্য তারা দিয়েছে তা পূরণও অনেকটা অসম্ভব। অন্যদিকে মত্স্য, পোল্ট্রি কিংবা সামগ্রিক প্রাণিসম্পদ খাতেও আশাব্যঞ্জক কিছু নেই।
সর্বোপরি প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষিতে বরাদ্দ থাকলে প্রাণিসম্পদ খাতে কোথায় কত বরাদ্দ তার কোনো উল্লেখ নেই। পোল্ট্রি শিল্পের দুর্দিনে খামারিদের পাশে দাঁড়াতে হবে, মত্স্য ও দুগ্ধ শিল্পে নিতে হবে কার্যকর উদ্যোগ। পাশাপাশি কৃষি পণ্যে ন্যায্যমূল্য দিতে হবে এমনটাই প্রত্যাশা কৃষক ও বিশেষজ্ঞদের।

Saturday, June 16, 2012

গৃহবর্জ্যে বছরে দুই লাখ টন সার,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

ঢাকার গৃহবর্জ্যে বছরে দুই লাখ টন সার হতে পারে

ঢাকা মহানগরের গৃহস্থালি বর্জ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ পচনশীল। এই বর্জ্য থেকে বছরে দুই লাখ ২০ হাজার টন পর্যন্ত জৈব সার হতে পারে, যার বাজারমূল্য প্রায় ২২০ কোটি টাকা।
এ ছাড়া পচনশীল বর্জ্য থেকে কয়েক লাখ ঘনফুট জ্বালানি গ্যাস, দুই লাখ টন কাগজের মণ্ড পাওয়া সম্ভব। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা ওয়েস্ট কালেকশন ফাউন্ডেশনের সভাপতি মনির হোসেন। ফাউন্ডেশনটি ঢাকা মহানগরে বেসরকারিভাবে বর্জ্য সংগ্রহকারী সংগঠনগুলোর ফোরাম।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপরিউক্ত তথ্য উপস্থাপন করে বলা হয়, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও বিনিয়োগ করে সহজেই বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা যায়। অনেক উন্নয়ন সহযোগী বা দাতা সংস্থা এই কাজে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। তাদের সেই আগ্রহ কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন ঢাকা সিটি করপোরেশন এবং সরকারের উদ্যোগ।
সংবাদ সম্মেলনে মেজর জেনারেল (অব.) আমিন আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব ঢাকা সবার স্লোগান। কিন্তু এখন পর্যন্ত পরিবেশবান্ধব ঢাকা প্রতিষ্ঠায় কার্যকর কোনো উদ্যোগ আমরা দেখতে পাইনি।’

কার্বাইড দিয়ে ফল পাকানো জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর

ফল আমাদের খাদ্য ও পুষ্টির অন্যতম উৎস। কিন্তু দেশের এক শ্রেণীর মধ্যসত্ত্বভোগী, মুনাফালোভী ব্যবসায়ী কৃত্রিমভাবে ফল পাকিয়ে ফলের খাদ্যমান বিনষ্ট করছে। হরহামেশা ক্যালসিয়াম কর্বাইডসহ বিভিন্ন প্রকারের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে আম, কলা, কাঁঠাল, আনারসসহ অন্যান্য আকর্ষনীয় ফল পাকানো হচ্ছে। এতে ক্রেতাসাধারণ ও ভোক্তা প্রতারিত হয়ে আর্থক এবং স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়ছে।
কার্বাইড কী?
ক্যালসিয়াম কার্বাইড এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ। এটি এক ধরনের যৌগ যা বাতাসে বা জলীয় সংস্পর্শে এলেই উৎপন্ন করে এসিটিলিন গ্যাস। যা ফলে প্রয়োগ করলে এসিটিলিন ইথানল নামক বিষাক্ত পদার্থে রুপান্তরিত হয়।
কিভাবে স্বস্থ্যের ক্ষতি করেঃ
কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল খেলে মানুষ দীর্ঘমেয়াদি নানা রকম রোগে বিশেষ করে বদহজম, পেটের পীড়া, পাতলা পায়খানা, জন্ডিস, গ্যাস্ট্রিক, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, লিভার ও কিডনি ন্ষট হওয়াসহ ক্যান্সারের মত জাটল রোগের সৃষ্টি হয়। এছাড়া মহিলারা এর প্রভাবে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দিতে পারে।

বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গোলাপ ফুলের চাষ।

গোলাপ ফুলকে ফুলের রাণী বলা হয়। রঙ, গন্ধ ও সৌন্দর্যের জন্য গোলাপ ফুল সবার কাছেই প্রিয়। এর ইংরেজি নাম Rose ও বৈজ্ঞানিক নাম Rosa sp. আমাদের দেশে নানান রঙ ও জাতের গোলাপ ফুল চাষ করা হয়ে থাকে। যেমন-ক্রিমশন গ্লোরি, পাপা-মাইল্যান্ড, টিপটপ, হানিমুন, সানসিল্ক, রোজিনা, গোল্ডেন ইত্যাদি। জাত ভেদে গোলাপ ফুলের রঙ, আকৃতি ও গন্ধ ভিন্ন হয়ে থাকে। আমাদের দেশের সাভার, যশোর, কুষ্টিয়া প্রভৃতি জায়গায় এখন ব্যবসায়িক ভিত্তিতে গোলাপ ফুল চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে।

বাজার সম্ভাবনাঃ

আমাদের দেশে সারাবছরই গোলাপ ফুলের চাহিদা থাকে। সৌখিন মানুষ তার ঘর সাজানোর জন্য ফুল ব্যবহার করে। এছাড়া বিয়ে, গায়ে হলুদ, বিভিন্ন সভা, সমাবেশ অনুষ্ঠানের স্থান ফুল দিয়ে সাজানো হয়ে থাকে। তাই বলতে গেলে সারাবছরই ফুলের চাহিদা থাকে। আমাদের দেশের প্রায় সব জেলা শহরে ফুলের দোকান দেখা যায়। এসব ফুলের দোকানে ফুল সরবরাহ করে আয় করা সম্ভব। এছাড়া গোলাপ ফুল চাষ করে দেশীয় বাজারে বিক্রয়ের পাশাপাশি ফুল বিদেশেও রপ্তানী করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে। রজনীগন্ধা ফুল বিদেশে রপ্তানি করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

গোলাপ ফুল উৎপাদন কৌশলঃ


চাষের উপযোগী পরিবেশ ও মাটি

অক্টোবর-নভেম্বর মাস চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। দীর্ঘস্থায়ী সূর্যের আলোযুক্ত খোলামেলা আবহাওয়া ফুল উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। মোটামুটি ঠান্ডা আবহাওয়ায় গোলাপ ভালো জন্মায়।গোলাপ চাষের জন্য পানি নিষ্কাশনের সুবিধাসহ বেলে দো-আঁশ, দো-আঁশ অথবা এঁটেল দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। মাটির পিএইচ ৬-৭ এর মধ্যে থাকা উচিত।

জাতঃ

গোলাপ ফুলকে অনেক শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে। তবে উল্লেখযোগ্য শ্রেণীগুলো হলো-

১. হাইব্রিড টি (Hybrid Teas) : এ শ্রেণীর ফুলগুলো বেশ বড়, সুগঠিত ও অনেক পাপড়িবিশিষ্ট। কাটা ফুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ক্রিমশন গ্লোরি, পাপা-মাইল্যান্ড, টিপটপ ইত্যাদি এ শ্রেণীর জাত।

২. ফ্লোরিবান্দা (Floribunda) : এ শ্রেণীর ফুলগুলো আকারে ছোট এবং থোকায় ধরে। কতকগুলো জাত কাঁটা ফুলের জন্য চাষ করা হয়। হানিমুন, সানসিল্ক, টিপটপ ইত্যাদি এ শ্রেণীর জাত।

৩. পলিয়েন্থা (Polyantha) : এ শ্রেণীর ফুলগুলো আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট এবং বড় বড় থোকায় ধরে। জর্জ এলগার, ক্যামিও, আইডিয়াল ইত্যাদি এ শ্রেণীর জাত।

৪. মিনিয়েচার (Miniature) : এ শ্রেণীর গাছ ছোট, পাতা ছোট এবং ফুল ছোট ছোট হয়। রোজিনা, গোল্ডেন, ইয়ালো ডল ইত্যাদি এ শ্রেণীর জাত।

বংশবিস্তারঃ

কাটিং, গুটিকলম ও ‘টি’ বাডিং এর মাধ্যমে গোলাপের বংশবিস্তার করা হয়। কাটিং ও গুটি কলম জুলাই-আগস্ট মাসে এবং ‘টি’ বাডিং ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে শেষ করতে হয়।

জমি তৈরিঃ

১. সাধারণত চারা রোপণের ২-৩ সপ্তাহ আগে জমিকে গভীরভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝরঝরে ও সমান করে নিতে হবে।

২. এরপর জমিতে ১.২ মিটার চওড়া ও পরিমাণমত লম্বা উঁচু বেড তৈরি করে নিতে হবে।

৩. দু’টি বেডের মাঝখানে পানি নিকাশ ও সেচের জন্য নালা তৈরি করতে হবে।

৪. বেডে গাছ লাগানোর জন্য এক মিটার গভীর এবং ৬০ সে.মি. চওড়া গর্ত করতে হবে।

৫. গর্ত করার সময় ২০ সে.মি. গভীর উপরের মাটি আলাদা করে রেখে বাকি মাটির সাথে ১০ কেজি কম্পোস্ট, আধা কেজি খৈল ও একমুঠো হাড়ের গুঁড়ো মিশিয়ে নিতে হবে।

৬. বাকি উপরের মাটির সাথে প্রয়োজনমত গোবর মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে নিতে হবে।

৭. বড় জাতের গোলাপের জন্য বেশি গোবর সার মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। বড় জাতের গোলাপের জন্য এক গর্ত থেকে অন্য গর্তের দূরত্ব ৬০ সে.মি. এবং ছোট জাতের জন্য ৩০ সে.মি. দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

চারা রোপণঃ

১. নতুন চারা না লাগিয়ে এক বছর পুরানো চারা লাগানো উচিত।

২. গর্তের মধ্যে চারা সোজাভাবে লাগাতে হবে।

৩. চারার শেকড় মাটি দিয়ে সম্পূর্ণ ঢেকে দিতে হবে।

৪. জোড় কলমের মাধ্যমে তৈরি চারার জোড়ের জায়গাটি মাটি থেকে অন্তত ৩-৪ সে.মি. উপরে রাখতে হবে।

সার প্রয়োগঃ

কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে গোলাপ ফুলের গাছে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদির স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা সম্ভব।

সেচঃ

১. চারা রোপণের পর, চারার গোড়ায় প্রাথমিক অবস্থায় ঘন ঘন পানি দিতে হবে।

২. চারা মাটিতে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে নতুন ডালপালা ছাড়ার পর খরা মৌসুমে প্রতি ১০ দিন পর পর একবার সেচ দিলেই চলবে।

৩. প্রতিবার পানি সেচের পর গাছের গোড়ার মাটি ঝরঝরে করে দিতে হবে।

রোগবালাই ও তার প্রতিকারঃ

গোলাপ ফুলের বাগানে পোকার আক্রমণ হলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে।

চাষের সময় পরিচর্যাঃ

১. চারার জোড়া জায়গাটির নিচের অংশ থেকে অর্থাৎ শিকড় গাছ (Root stock) হতে কোন ডালপালা বের হলে ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে দিতে হবে।

২. গাছের প্রথম দিকে বের হওয়া পুষ্পকুঁড়ি ভেঙ্গে দিলে পরবর্তীতে গাছ বড় আকারের ফুল দিবে।

৩. মার্চ-এপ্রিল মাসে পচা গোবর এবং কম্পোস্টের মালচ গাছের গোড়ায় দিতে হবে।

৪. বয়স্ক ডালে ফুল ভালো হয় না। তাই সাধারণত অক্টেবর-নভেম্বর মাসে গোলাপ গাছের ডালপালা ছাঁটাই করতে হবে। ছাঁটাইয়ের সময় মরা ডাল, রোগাক্রান্ত ডালপালা ইত্যাদি ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে ফেলতে হবে।

৫. গাছের বৃদ্ধির উপর নজর রেখে গোলাপ গাছে হালকা, মধ্যম এবং ভারী ছাঁটাই করতে হয়। প্রথম বছরে গাছ ছাঁটাইয়ের কোন প্রয়োজন হয় না।

৬. ছাঁটাইকৃত ডাল যেন শুকিয়ে না যায় তার জন্য ডালের সামনে ছত্রাকনাশক ঘন করে গুলে তুলির সাহায্যে লাগিয়ে দিতে হবে।

৭. ডাল পালা ছাঁটাইয়ের পর গোলাপ গাছের গোড়া থেকে ২০ সে.মি. দূরে গোল করে মাটি খুঁড়ে শেকড়কে বের করে দিতে হবে। ৮-১০ দিন এ অবস্থায় রেখে দিলে শেকড়ে বাতাস ও রোদ লাগবে। এতে গাছের গোড়ায় থাকা ক্ষতিকর পোকামাকড় ধ্বংস হবে।

সাধারণত প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রতি দিন গড়ে প্রায় ৪০০টি ফুল পাওয়া যায় এবং এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে গোলাপ ফুল চাষের জন্য প্রায় ১০০০০ টাকার মত খরচ হয়।

দেশীয় ও বিশ্ব বাজারে ক্রম বর্ধমান ফুলের চাহিদার কারণে গোলাপ চাষ হতে পারে একটি বিকল্প অর্থকরী ফসল।

কৃষককে ক্ষমতায়িত করার বিকল্প নেই.............................

বিজয়ের চল্লিশ বছর পার করেছে বাংলাদেশ। এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে খাদ্য উৎপাদনকে। একাত্তর সালের প্রায় ১০ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে আবাদ হতো প্রায় ১০ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য। যা তৎকালীন সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য যথেষ্ট ছিল না। কিন্তু স্বাধীনতার চার দশকে জমির আয়তন প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেলেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের দারপ্রান্তে। এই বিশাল অর্জনের পেছনে দেশের আপামর কৃষক সাধারণ থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবদান রয়েছে। কিন্তু কৃষির এই বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টায়নি কৃষকের ভাগ্য। গ্রামের প্রান্তিক কৃষক ও নগরের ধনীক শ্রেনীর মধ্যে আয়বৈষম্য বেড়েছে কয়েকগুণ। দেশের আপামর জনসাধারণের খাদ্য গ্রহণের হারও বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, কিন্তু এই সুফল আসেনি দরিদ্র জনগোষ্ঠির ভাগে। এখনও গবেষকদের হিসেবে দেশের ৩০ ভাগ মানুষ রয়েছে দারিদ্রসীমার নীচে। রয়েছে অদৃশ্য দারিদ্রও। সব মিলিয়ে কৃষি ও কৃষকের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির গভীরে যেতে আমরা একই সঙ্গে কথা বলেছি যশোরের বাঘারপাড়ার কৃষক সংগঠক আয়ুব হোসেন ও প্রখ্যাত বিজ্ঞানী আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. জয়নুল আবেদীনের সঙ্গে। কথোপকথনের চুম্বক অংশটি তুলে ধরা হচ্ছে এখানে।
আইয়ুব হোসেন : আমার জন্ম ব্রিটিশ সময়ে। পাকিস্তানের পুরো সময়টিই আমি দেখেছি। দেখেছি দুর্ভিক্ষ ও অভাব। দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে আমি দেখেছি, আমার বাবা বছরের পর বছর ক্ষেতের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তখন প্রায় প্রতি বছর খরায় ধান পুড়ে যেত। সেসময় আমাদের মতো কৃষক পরিবারগুলোতে দুর্ভিক্ষ দেখেছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও দুর্ভিক্ষে অনেক লোককে মারা যেতে দেখেছি। সেসময় মানুষের বেঁচে থাকার যে সংগ্রাম দেখেছি, তা আজও দেখছি। কয়েক বছর আগের সিডর ও আইলার মতে দূর্যোগের কথা যদি বলি, সেসময় খাদ্য সংকটে পড়ে, সারা পৃথিবীতে আমরা খাদ্য খুঁজেছি, কিন্তু কেউ আমাদের দিকে এগিয়ে আসেনি। আমরা বুঝেছি, কারো সহায়তা পাওয়ার দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। যেভাবেই হোক আমাদেরকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েই বাঁচতে হবে। সেই দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার সংগ্রামটি ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের মতোই। উপকুলীয় অঞ্চলগুলিতে যে সংগ্রাম চলছেই।
ড. অমর্ত্য সেন নোবেল পুরস্কার পেলেন এ উপমহাদেশের মানুষ কীভাবে না খেয়ে মারা যাচ্ছে ঠিক সেই বিষয়ের ওপর। তিনি দেখিয়েছেন খাবার আছেÑকিন্তু তার সুষ্ঠু বন্টনের অভাবে মানুষ খেতে পাচ্ছে না। আমাদের দেশে কৃষি উন্নয়নের জন্য উৎকৃষ্ট একটি ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। যা গড়ে তুলেছেন দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বিজ্ঞানীরা। যারা স্বাধীনতার পর থেকেই এদেশের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছেন। তারা একে একে গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন, কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন, সম্প্রসারণ বিভাগ গড়ে তুলেছেন, বিজ্ঞানস্মমত সেচ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন। এর সঙ্গে কৃষকরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে, বেঁচে থাকার সংগ্রামে। এখানে বিজ্ঞানীদের উন্নয়নের সংগ্রাম আর কৃষকদের বাঁচামরার একটি সমন্বয় ঘটেছে। এই যুদ্ধের অন্যতম সেনাপতি হিসেবে এদেশের বড় বড় বিজ্ঞানীদেরকেই আজ অনেক বেশি মূল্যায়ণ করার প্রয়োজন রয়েছে।
আমাদের স্বাধীনতার পর ভিয়েতনাম স্বাধীন হয়। সেদেশের কৃষি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য যাদের অবদান রয়েছে তার মধ্যে আমাদের দেশের কৃতী বিজ্ঞানী ড. কাজী বদরুদ্দোজাও একজন। সেই ভিয়েতনাম এখন বিশ্বের অন্যতম চাল রপ্তানীকারক দেশ। ওরা সশস্ত্র সংগ্রামের ভেতর দিয়ে আসা স্বাধীন জাতি, আমরাও। কিন্তু আমরা আমাদের ঘরে বড় বড় রতœ থাকতেও তাদের মূল্যায়ণ করতে পারিনি, তাদের শ্রেষ্ঠ চিন্তাটি গ্রহণ করতে পারিনি। এটি আমাদের অনেক বড় ব্যর্থতা।
আমাদের দেশে খাদ্যের সুব্যবস্থাপনারও অনেক বেশি ত্রুটি রয়েছে। আমরা কৃষিপণ্যের বহুবিধ ব্যবহারের শিক্ষাটি পাইনি। আলু বেশি উৎপাদন হয়েছে বলে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। সে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। অথচ আমাদের দেশের পশুখাদ্যে তীব্র সংকট রয়েছে। আমরা উৎপাদিত কৃষিপণ্যকে বাছাই করে মানুষ ও কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গবাদি পশুর খাদ্য সমানভাবে ব্যবহার করতে পারি।
সবকিছুর জন্য প্রয়োজন দেশের কৃষককে সংগঠিত করা। কৃষকের কথাবলার প্লাটফরম। যেটি আমাদের দেশে নেই।

ড. জয়নুল আবেদীন : বাংলাদেশের কৃষক দরিদ্র হতে পারে, ক্ষুদ্র হতে পারে, কিন্তু তার ভেতহরেই একটি শক্তি সবসময় রয়ে গেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি অপশাসন থেকে আমরা মুক্ত হই। কিন্তু আমাদের দরিদ্র কৃষকরা দারিদ্র থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যেই সবসময়ই একটা সংগ্রাম করেছে ও করছে। বহু দূর্যোগই আমাদের উপর এসেছে, কিন্তু কোন কিছুতেই এই কৃষকরা হতোদ্যম হয়ে পড়েনি। দ্রুতই নিজেদেরকে আবারো দাঁড় করিয়েছে। একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করতে চাই, যুদ্ধ করতে যেমন অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হয়, আমাদের কৃষকরাও সব যুদ্ধে উত্তীর্ণ হতে পারতেন না, যদি তাদের হাতে সেই অস্ত্রটি না পৌছানো যেত। প্রযুক্তি, উন্নত জ্ঞান ও উৎপাদনের অনুকুল পরিবেশ যদি তার কাছে একেবারেই না থাকতো। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কল্যাণে হেক্টরপ্রতি বেশি বেশি ধান উৎপাদনের কলাকৌশল ও উন্নত জাত কৃষকদের হাতে এসেছে ঠিকই কিন্তু একটি বিষয় সুক্ষভাবে উপলব্ধি করার প্রয়োজন রয়েছে, তা হচ্ছেÑ উৎপাদনটাই মূল বিষয় নয়। কৃষকের লাভ যদি না হয়, তাহলে উৎপাদন দিয়ে কী করবে সে ? বিভিন্ন সরকার সবসময়ই এই কাজটি করার চেষ্টা করেছে। একটি আদর্শ বাজার ব্যবস্থা গড়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা রয়েছে একথা ঠিক, কিন্তু সেচ ব্যবস্থা সুগম করা, সারে ভর্তূকি আরোপ এসব বিষয়গুলো কৃষকের যুদ্ধে সহায়তা করেছে। তবে আত্মসন্তুষ্টির কোন সুযোগ এখানে নেই। আমাদের অনেক কিছু করার ছিল, যা আমরা করতে পারিনি, এটিও মাথায় রাখার প্রয়োজন রয়েছে।
দেশের গড় জাতীয় আয় বেড়েছে, কিন্তু কৃষকের উন্নয়ন হয়নি। খাদ্যের সমবন্টন এখনও অমিমাংসিত একটি বিষয়। সরকার ও আমাদের সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে এমন একটি সেতুবন্ধন প্রয়োজন যার মধ্য দিয়ে দেশের উন্নয়নের সুফল, ধনী দরিদ্র সবার মধ্যে সমানভাবে না হলেও যতটা সম্ভব ভাগ করে দেয়া যায়। এখানে একজন শিল্পপতির আয় যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যে সমাজ থেকে যা গ্রহণ করতে পারছে, একজন কৃষক তা কোনভাবেই পাচ্ছে না।
সামগ্রিক কৃষিতে সমস্যার কলেবর বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বৈরি প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে। নদীগুলোর নাব্যতা কমে যাচ্ছে। বহু নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে, লবণাক্ত পরিবেশের আয়তন বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বিজ্ঞানী, কৃষক সবার জন্যই বর্তমান সময়টি অনেক বেশি কঠিন। এই সময়ে কৃষক, বিজ্ঞানী ও তাদের মধ্যবর্তী অবকাঠামোকে ক্ষমতায়িত করতে হবে। আর এই কাজটি করতে সবচেয়ে আগে সংগঠিত করতে হবে কৃষককে। আর বিজ্ঞানীদেরকে ক্ষমতায়িত করার জন্য সৃষ্টি করতে হবে গবেষণার উন্নত পরিবেশ। তাদের সঠিক জ্ঞান লাভের সুযোগ তৈরি করতে হবে। এদেশের ঋণের টাকায় শিক্ষা অর্জন করা কোন বিজ্ঞানী যাতে স্থায়ীভাবে বিদেশে পাড়ি না জমান, সেই দিকটি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। সবার মধ্যে দেশপ্রেম ও আন্তরিকতার বিষয়টিও এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

আমার কথা,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

 কৃষি আমাদের দেশের অথর্নীতিতে কতটুকু অবদান রাখে তা আমরা কম বেশী সবাই জানি। আর এই কৃষি উৎপাদনকে বেগবান করতে যারা সবার্ত্মকভাবে কাজ করে যান তারা হলো আমাদের কৃষক ও সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ। কৃষকগণ কৃষি উৎপাদনে সরাসরি অংশগ্রহন করেন, আর অন্য সবাই বিভিন্নভাবে তাদের সাহায্যে সহযোগিতা করে থাকেন।

আমাদের দেশের কৃষি বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। যে দেশে কৃষি উৎপাদন বেশী, সেদেশ ততটাই খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ন। খাদ্য আমদানীর উপর নিভরশীল হতে হয় না। দেশের অভ্যন্তরে পণ্যের মূল্য স্থীতিশীল থাকে। তবে অতীতের তুলনায় আমাদের দেশের কৃষি অনেকটাই আধুনিক ও সমৃদ্ধশীল। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে বিভিন্ন গণমাধ্যম যেভাবে কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে খবর প্রকাশ করছে তা এক কথায় অভাবনীয়। কৃষকগণ এখন ঘুরিয়ে দাঁরাতে শিখেছে ভালোমন্দ জানতে শিখেছে। কৃষকগণ অতীতের তুলনায় অনেক বেশি শিক্ষিত ও প্রযুক্তি নির্ভর।

কৃষি তথা কৃষকের ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পেতে কৃষককে অনেক বেগ পোহাতে হয় নানা সময়। যদিও সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন মাধ্যমে তারা সাহায্য সহযোগিতা পান। তবে তা অনেক সময় চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হয়ে যায়। কৃষি ও কৃষকের যত বেশি সমস্যা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হব ততই বেরিয়ে আসবে সমাধানের পথ। আর তা হবে কৃষির সাথে সম্পৃক্ত সকলের জন্য মঙ্গলজনক।

“কৃষি তথ্য বিকাশে আওয়াজ তুলি” এই স্লোগানকে কেন্দ্র করে আমাদের পদযাত্রার সূচনা। “কৃষি ব্লগ” কৃষি ও কৃষকের সাথে সম্পৃক্ত সকল বিষয় নিয়ে মুক্ত আলোচনা কেন্দ্র। আসুন, আমরা সবাই মিলে কৃষি ব্লগকে সমৃদ্ধ করি। আমাদের লেখনির মাধ্যমে হয়তো বেরিয়ে আসবে আমাদের কৃষির বিভিন্ন সমস্যা ও তার সঠিক সমাধান।

Wednesday, June 13, 2012

আধুনিককৃষি প্রযুক্তির স্বপক্ষে বাজেট বরাদ্দ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,





জুন মাস বাংলাদেশের বাজেটের মাস। কিন্তু ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বাজেট যাদের উপলক্ষে, তারা এ বাজেটের বিষয়াদির খবর রাখার সুযোগ পায় না। অর্থাত্ কৃষকের কথা বলা হচ্ছে। যারা বাজেট প্রণয়ন করে, ব্যাখ্যা করে তারা বুঝাপড়া ও মননে-মনস্তত্ত্বে কৃষক থেকে হয়তবা অনেক দূরে; গ্রামীণ পর্যায়ের কৃষকের বাজেট ভাবনা শুনে তাই অনুমান হয়। তাই দেশে বাজেট প্রণয়নের বিষয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের স্বপক্ষে বিরাজমান ও ঐতিহাসিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার আলোকে বর্ণনা করা হল- বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কৃষির বিবর্তন বিবেচনায় নিয়ে বলতে হচ্ছে- কৃষক বাঁচাতে হলে কৃষকের কৃষি কাজকে অব্যাহত রাখতে কৃষকের সামাজিক জীবীকার উপর যেমন- ছেলেমেয়েদের শিক্ষা, চিকিত্সা, অনুষ্ঠান সম্পাদন, আবাস, ব্যবসা প্রভৃতি খাতে ভর্তুকি দান-অনুদান দিতে হবে। এতে দেশের কৃষক দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় নিশ্চয়তা দেবে। বিশ্বের যেকোনো কৃষিভিত্তিক দেশের মত কৃষকের উত্পাদন একটা ন্যূনতম সময় কৃষকের নিজের গোলায় নিজের কর্তৃত্বে থাকবে। এতে ফড়িয়ার প্রভাব কমবে।
বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে কৃষি খামার করে টিকে থাকতে হলে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে গ্রামীণ কৃষির অধিকাংশ স্থানে যে অবস্থা, ইউরোপের অনেক দেশে শতবর্ষ আগে এমন অবস্থা ছিল। কৃষির এই অবস্থার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল- কৃষির লাভ কমে যাওয়ায় শিল্পে রূপান্তর, জমি কমে গিয়ে উত্পাদন কমে যাওয়ায় আমদানি বেড়ে যাওয়া, শহরের বসতি বাড়তে থাকা, সর্বোপরি কৃষি কাজে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হতে কৃষি খামার মালিকের সামর্থ্য ও সম্পদ কমে যাওয়া। সর্মথ্য কমে যাওয়ার মধ্যে ছিল সামাজিক ও জীবীকা ব্যয় মেটাতে গিয়ে কৃষি খামারের চলতি মূলধন কমে যাওয়া, উত্পাদন ঝুঁকি মোকাবিলার শক্তি কমে যাওয়া এবং বাড়িতে বা খামারের, গোলা-গুদাম, হাল-যন্ত্রপাতি, পরিবহন, যন্ত্রপাতি বিনষ্ট করে ফেলা, এ ধরনের আরো অনেক অনুসঙ্গই। তখন সেসব দেশে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক কৃষি শিক্ষা, গবেষণা ও খামার সেবা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয় এবং দেশি আইন-বিধি পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়।
কৃষি কাজকে কারিগরি স্বীকৃতি দিতে কৃষকের নাগরিক-সামাজিক কার্যাবলীর উন্নয়নের জন্য নীতিবিধান প্রণয়ন করে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়। সে সময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জামাতা নলিনী বাবুকে লিখেছিলেন- “কৃষক পরিবারের শিক্ষা, চিকিত্সা, বাসস্থান ও বয়স্ক কৃষকের নিরাপত্তার জন্য  আমাদের অনেককিছু করতে হবে”। কিন্তু বাস্তব সত্য হল- কৃষি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে আবশ্যকভাবে আধুনিক প্রযুক্তির খামার মালিকের আর্থিক ও অবকাঠামোগত সামর্থ্য রক্ষা করতে হবে। সাথে সাথে কৃষি, কৃষক, কৃষি খামার, কৃষি উত্পাদন ও কৃষি আয়-ব্যয় নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো অসত্য কথা বলা যাবে না। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিপালনযোগ্য আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে উচ্চফলনশীল জাতের উন্নত চাষ, নিজস্ব দায়িত্বে উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার, ফসল কর্তনোত্তর কাজ এরপর নিজের খোরাক-চাহিদা পূরণ করে বাড়তি উত্পাদন পরবর্তী কোনো সুবিধামত সময়ে উপযুক্ত দামে বিক্রি করা। এর যেকোনো একটির আধুনিক লাভজনক প্রযুক্তি ঝুঁকিমুক্তভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। এই মুহূর্তে দেশে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের একটি অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হল- কৃষকের আর্থিক সামর্থ্য নেই। কৃষি আয় কমে গেলে কৃষক তার পারিবারিক ও সামাজিক ব্যয় ঠিক রাখতে চেষ্টা করে এবং তা নিজে না যেয়ে বা হাল-গরু বিক্রি করে আর্থিকভাবে  ভেতরে ভেতরে পঙ্গু হতে থাকে। তাই বাংলাদেশে কৃষি খামারের উত্পাদন বাড়াতে হলে কৃষক ও সরকার উভয়েরই করণীয় রয়েছে- প্রথমত, খামার মালিকদের সচেতন থাকতে হবে তিনি যেন কৃষি খামারের যা কিছু আয় হবে, তা কৃষি খামারের সম্পদ-সামর্থ্য বিনষ্ট করে অন্য কোনো ব্যয় না করেন। কৃষি খামারের মূলধন যন্ত্রপাতি, চলতি ব্যয়, ফসল কর্তনোত্তর সময়ের জীবীকা ব্যয় হাতে রেখে তারপর বিদ্যুত্-জ্বালানি, বাহ্যিক-বিলাস সম্পদ তৈরিতে উদ্যোগ নেবেন। মনে রাখতে হবে দেশের প্রতিটি শিল্পের গুদাম রয়েছে। পণ্য উত্পাদনের পর পর তা নিয়ে শিল্পপতি বিক্রি করার জন্য রাস্তায় বসেন না। তিনি পণ্য গুদামজাত করে তার বাজারের চাহিদার ভিত্তিতে বিপণন করে লাভবান হন। সেইভাবে কৃষককেও ফসল উত্পাদন করে প্রক্রিয়াজাত করে নিজের গোলায় তুলবেন তারপর সময় সুযোগমত উপযুক্ত মূল্য পাওয়ার সময় বিপণন করবেন।
কৃষি পণ্য কাঁচা-পাকা বিক্রি করে দিয়ে শেয়ারে ফেলবেন বা ফ্ল্যাট/প্লট কিনবেন। তারপর শেয়ারে লস খেয়ে বা ফ্ল্যাট/প্লটের দখল না পেয়ে খামারের হাল-গরু ও বসত ঘর বিক্রি করে গোলাঘরে বিছানা পাতনে, এটা কোনো কৃষকের কাজ হতে পারে না। কৃষকের লক্ষ্মী হল তার নিজস্ব খামারের কৃষি সম্পদ তার গোলাঘর এ সম্পদ অবশ্যই তাকে রক্ষা করে চলতে হবে। দ্বিতীয়ত, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চত করতে হবে। কৃষক সম্পর্কে এবং সকল দেশের প্রাথমিক উত্পাদন খাত কৃষি সম্পর্কে কোনো অসত্য তথ্য বলা যাবে না, অন্তত রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে। প্রাথমিক তথ্যে ভুল মানে সমগ্র সিস্টেমে ভুল। বাংলাদেশের কৃষি তথ্য বৈচিত্রে পরিপূর্ণ, যার নিরসন হওয়া জরুরি। এ প্রসঙ্গে বলা যায়- ভুল পথে ভতুর্কি দেয়ার চেয়ে সরকারের উচিত কৃষকের শিক্ষা, চিকিত্সা, বাসস্থান প্রভৃতি খাতে দান-ভর্তুকি দেয়া। যাতে কৃষক তার নিজের উত্পাদন অন্তত কয়েকমাস ঘরে রাখতে পারে, প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে। তা হলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি উত্পাদন বাড়িয়ে নিজেরা লাভবান হতে পারে। সাথে সাথে সারসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণে অপচয় কমিয়ে তাকে আরো প্রতিদ্বন্দ্বীমূলক সামর্থ্য বাড়ানো। শিল্পের বা আমাদানিতে অতি ব্যয় করে সারের/উপকরণের মূল্য বাড়িয়ে সে খাতে ভর্তুকি  দিলে তাতে অপচয় উত্সাহিত হয়। তাতে কৃষকের কোনো উপকার হয় না। এ সব বিষয় মাথায় রেখে দেশের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ ও কার্যাবলী স্থির করা হলে দেশে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি বাড়বে এবং কৃষকের উন্নয়ন স্থায়ীত্বশীল হবে। কৃষি খাতে ভর্তুকি দেয়ার বাজেটের চেয়ে কৃষক পোষ্য তার সামাজিকতাকে ভর্তুকি দেয়ার বাজেট দেশের কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে পারে। এতে দেশের উন্নয়ন হবে।


দেশেরমাটিতে বিদেশি ফলের চাষ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,








স্ট্রবেরি: বাংলাদেশে যেসব বিদেশি ফল চাষ শুরু হয়েছে এবং ইতোমধ্যে জনপ্রিয় হয়েছে সেগুলোর মধ্যে স্ট্রবেরি সবচেয়ে এগিয়ে। এর আদিনিবাস হিমালয় পর্বতমালার আশেপাশে মনে করা হয়। স্ট্রবেরি মূলত মৃদু শীতপ্রধান অঞ্চলের ফল। যেখানে শীতকাল মৃদুভাবাপন্ন ও গ্রীষ্মকাল শুষ্ক সেখানে  এ ফল ভাল জন্মে। বর্তমানে উষ্ণমণ্ডলীয় জাত উদ্ভাবন হবার ফলে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সাফল্যজনকভাবে ফলটির চাষ হচ্ছে। বর্তমানে ইউরোপ, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান, উত্তর এশিয়া, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও আমেরিকায় ব্যাপক চাষ হয়।

স্ট্রবেরি একটি ক্ষুদ্রাকার লতাজাতীয় উদ্ভিদ। বারি থেকে অবমুক্ত জাত বারি স্ট্রবেরি-১। এছাড়া রাবি থেকে উদ্ভাবিত জাত রাবি-১, ২, ৩। লতা জাতীয় ছোট গাছ বলে সহজেই ছাদে, বসতবাড়ির উঠোনে বা মাঠে চাষ করা যায়। তবে লতার চারা থেকে ভাল ফলন পাওয়া যায় না। এজন্য এটি চাষের জন্য টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উত্পাদিত চারাই ব্যবহার করতে হবে।
ফলের স্বাদ হালকা মিষ্টি থেকে কিছুটা টক। এই ফলে প্রচুর ভিটামিন এ. বি-কমপ্লেক্স ও সি রয়েছে। এছাড়াও কিছু পরিমাণে ভিটামিন-ই, চর্বি এবং আমিষ থাকে। রোপণ সময় মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য অক্টোবর এবং ফল সংগ্রহ সময় ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। লাল রঙয়ের ছোট ছোট ফলগুলো গাছেই পাকাতে হবে। এজন্য পাখির উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে জাল দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এতে খরচ পড়বে বেশি। আবার পাকা ফল ১-২ দিনের বেশি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায় না।
সব সময় সূর্যের আলো পড়ে এমন জমি স্ট্রবেরি চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। মাটি সুনিষ্কাশিত হতে হবে। স্ট্রবেরি গাছ মোটেই জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। গ্রীষ্মকালে ফুল ও ফল ব্যাহত হয় এবং অতি বৃষ্টিতে এ গাছ সহজেই মারা যায়। বাংলাদেশে এ ফল চাষের এটাই প্রধান সমস্যা। আলু, মরিচ, টমেটো, বেগুন যে জমিতে চাষ করা হয় সে জমিতে স্ট্রবেরি চাষ না করাই ভাল।
প্রতি হেক্টর জমির জন্য ২০ থেকে ২৫ টন জৈব সার, ২০০ কেজি করে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার ব্যবহার করতে হবে। সারের মাত্রা বেশি হলে পাতার বৃদ্ধি বেশি হবে এবং ফুল ও ফল ধারণ ঠিকভাবে হবে না।
মাটি ঝুরঝুরে ও জো অবস্থায় চারা রোপণ করতে হবে। মাটির উপরের ১-২ ইঞ্চি জৈব সার দিলে ভাল হবে। পানি যেন জমে না থাকে, এজন্য উঁচু বেডে চারা লাগাতে হবে ও চারপাশে নালা রাখতে হবে। ৫০ থেকে ৬০ সেমি দূরে দূরে সারি করে চারা থেকে চারা ৪০ থেকে ৪৫ সেমি ব্যবধানে প্রতি বেডে ২ সারি করে চারা লাগাতে হবে।
মাটিতে রসের ঘাটতি হলেই পানি সেচ দিতে হবে। ফুল ধারণ ও ফল পুষ্ট হওয়ার সময় পানির ঘাটতি হলে ফলন অনেক কমে যাবে। আগাছা নিয়ন্ত্রণ ও ফলকে মাটির সংস্পর্শ থেকে রক্ষার জন্য মাটির উপর খড় বিছিয়ে দিতে হবে। ছাদে বা টবে চাষ করলেও ফল ধরার সময় গোড়ায় খড় বা কাগজ বিছিয়ে দিতে হবে।
আদ্রতা বেশি হলে পাতায় দাগ ও ফল পচা রোগ হতে দেখা যায়। নিয়ন্ত্রণের জন্য মাটিতে জলাবদ্ধতা হতে দেয়া উচিত নয়। আক্রান্ত পাতায় ডায়থেন এম-৪৫  প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে সেপ্র করতে হবে এবং পচন ধরা ফল সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
একবার রোপণ করলে স্ট্রবেরি গাছ থেকে একবারই ফল সংগ্রহ করা যায়। আমাদের দেশে শীতের শুরুতে মধ্য সেপ্টেম্বর মাসে রোপণ করা গাছে ডিসেম্বর মাস থেকে ফুল আসা শুরু হয় ও ফল ধরতে থাকে। ফল প্রথমে সবুজ থাকে ও ধীরে ধীরে পুষ্ট হলে লালচে বর্ণ ধারণ করে। সংগ্রহের পর ১-২ দিন ফল ভাল থাকে। এর পর ফলে পচন ধরে। প্রতি ফলের ওজন প্রায় ১০ থেকে ১৫ গ্রাম হয়। আমাদের দেশে গাছপ্রতি ২০ থেকে ৩০টি ফল পাওয়া যায়। শেষ 
 


কৃষিবাজেট :কৃষকের আশা পূরণহয়নি

উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য ৮ হাজার ৯১৭ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বাজেট ঘোষণায় এবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কৃষির গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন। তুলে ধরেছেন কৃষিক্ষেত্রে চালু বেশকিছু কর্মসূচির কথাও। কিন্তু আগামী অর্থবছরে কৃষক খামারিদের দাবি ও প্রত্যাশাগুলো খুব বেশি আমলে এসেছে বলে মনে হয় না। অধিকাংশ কৃষকের দাবি ছিল উপকরণ সুলভে প্রাপ্তি ও উত্পাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য। কৃষি খাতে গত বছরের তুলনায় ৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি কমেছে। এবার বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা। যদিও গত বছরের ব্যয় না হওয়া ৩ হাজার কোটি এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে দাঁড়াবে ৯ হাজার কোটি টাকা। এই হিসাব ধরলে তাতে কম বলা যায় না। কৃষি খাতের জন্য এবার বিভিন্ন পরিকল্পনা ও দিক নির্দেশনার কথা উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু ওই বিবরণীতে কৃষক ও খামারিদের জন্য তেমন কোনো সুখবর নেই।
এবারের বাজেটের কৃষি খাত মূলত গত বছরের বাজেটেরই একটি প্রতিচ্ছবি মাত্র। গত বাজেটের বরাদ্দ ও পরিকল্পনার বিবরণগুলো এবারও তুলে ধরা হয়েছে। আগামীর পরিকল্পনা এসেছে কম। কৃষিতে সরকারের বহুল আলোচিত সাফল্যের অংশ হিসেবে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, কৃষকদের উন্নয়নকল্পে ১ কোটি ৪০ লক্ষ কৃষককে ‘কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড’ প্রদান করা হয়েছে। মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুযোগ পেয়েছেন তারা। উল্লেখ করা হয়েছে, এবারের আউশ মৌসুমে কৃষকদের জন্য প্রদত্ত সহায়তার কথাও। উফশী আউশ ও বোনা আউশ (নেরিকা) উত্পাদনের জন্য ৫৬টি জেলায় ৩ লক্ষ ৬৫ হাজার ২০৬ কৃষক পরিবারকে দেয়া হয়েছে বিনামূল্যে সার ও বীজ। একই সাথে ৩৫টি জেলায় কৃষকদের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে, গত তিন বছরে ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া সারের ভর্তুকি বাবদ ১৭ হাজার ৯২ কোটি টাকা প্রদান করার কথাও।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় কৃষক পর্যায় থেকে সংগৃহীত তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার কথাও উল্লেখ করেছেন। ময়মনসিংহে কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মন্ত্রী নিজেই প্রত্যক্ষ করেছিলেন বীজ নিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন কৃষক। তিনি এবার বাজেট বক্তৃতায় সে কথাই উল্লেখ করে বলেছেন, ‘উন্নতমানের বীজের অভাব রয়েছে আমাদের দেশে। কৃষক প্রায়ই দোকানীর প্রলোভনে ভাল জাতের বীজ কিনে ক্ষেতে বুনে শেষে প্রতারিত হয়। ভাল জাতের বীজের চাহিদা থাকলেও বিএডিসির সরবরাহকৃত বীজ সে চাহিদা মেটাতে পারে না। তাই উন্নতজাতের বীজ সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বিএডিসি মাত্র ১৮ শতাংশ বোরো বীজ সরবরাহ করত। বর্তমানে প্রায় ৬০ শতাংশ বোরো বীজ সরবরাহ করছে।  মানসম্মত বীজ সহজলভ্য করার জন্য ‘সার্কসিড ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া হাইব্রিড ধান চাষের আওতা বাড়ছে।’ কিন্তু এর বাইরে বিএডিসি’র বীজ উত্পাদন সাধ্য বৃদ্ধির জন্য আগামী অর্থবছরের জন্য তেমন কোনো দিক নির্দেশনা আসেনি।
এবারের বাজেটে বরাদ্দ ও নতুন দিক নির্দেশনা রয়েছে কম। তবে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন কৃষির গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোর কথা। যদিও সমাধানের কোনো কৌশল ও বরাদ্দের কথা উল্লেখ করা হয়নি। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে ক্রমশ মাটি হয়ে যাচ্ছে অনুর্বর। মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় অজৈব সারের পাশাপাশি জৈব সারের উত্পাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। গত তিন বছরে ৬৮ লক্ষ কম্পোস্ট সারের স্তূপ মনিটরিংসহ ২০ লক্ষ নতুন কম্পোস্ট সারের স্তূপ স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি এ সময়ে লাগসই আধুনিক প্রযুক্তির ওপর ১৫ লক্ষ ৮৭ হাজার কৃষক ও ৫৬ হাজার ৬৫৯ জন সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এই উদ্যোগগুলো বিগত বছরগুলোর একটি ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ। এবার নতুন কিছুই যুক্ত হয়নি।
পোল্ট্রি খাত একেবারে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হলেও এবার বাজেটে এই খাতের জন্য নেই তেমন কোনো বরাদ্দ ও নির্দেশনা। আশার বাণী হিসেবে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, অগামী অর্থবছরে বাজেটে এ খাতে দেয়া প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হবে। তিনি উল্লেখ করেছেন বিগত অর্থবছরে নেয়া ভুট্টা চাষের উদ্যোগের কথা। তিনি গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, খাদ্যের অন্যতম উপাদান হল ভুট্টা। ২০১১-১২ অর্থবছরে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের ভুট্টা আবাদে সহায়তার জন্য ৫ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। পাশাপাশি ভুট্টা চাষের জন্য বর্তমানে ৪ শতাংশ হারে কৃষি ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে প্রায় ১৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এপ্রিলে ২০১২ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ৭৩.৯ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ৩’শ ৩০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১৪ হাজার ১৩০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে শস্যবীমা বিষয়ে কৃষকরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন। বিষয়টি পর পর কয়েক বছর কৃষকের সুপারিশ আকারে অর্থমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হয়। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় চলতি অর্থবছরে নেয়া সরকারের উদ্যোগের কথা পুনরুল্লেখ করেন। বলেন, গত বাজেটে শস্যবীমা প্রচলনের লক্ষ্যে পাইলট কর্মসূচি চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার। ইতোমধ্যে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের আওতায় পাইলট ভিত্তিতে শস্যবীমা স্কিম চালু করা হয়েছে।
কৃষক যাতে তার উত্পাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান সে লক্ষ্যে অঙ্গীকার অনুযায়ী ইতোমধ্যে ৪৯০টি কৃষি বিপণন দল, ১৮ হাজার কৃষক ক্লাব, ৬০টি উপজেলায় গ্রোয়াস মার্কেট এবং ২১টি জেলায় পাইকারী বাজার নির্মাণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছরে সারাদেশে ৮টি এ্যাসেম্বল সেন্টার নির্মাণ এবং ৮০০ কৃষক দল গঠন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, কৃষকদের তথ্য প্রাপ্তিতে কৃষি তথ্য কেন্দ্র, ভিডিও কনফারেন্স ও এসএমএস এর মাধ্যমে কৃষককে তার সমস্যার সমাধান দ্রুততম সময়ে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা চলছে। বর্তমানে ৯৫টি ইউনিয়নে কৃষি তথ্য যোগাযোগ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে এবং আরো ১৫০টি ইউনিয়নে এ কেন্দ্র চালু করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে মোট ৯৪৯ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় মাত্র ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বেশি। অর্থমন্ত্রী এই দু’টি খাতের গুরুত্ব ও অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ উপ খাতটির গুরুত্ব অপরিসীম। এই উপ খাত থেকে জাতীয় উত্পাদনের ৮ শতাংশ আসছে। একই সাথে পূরণ করছে দেশের দৈনন্দিন খাদ্যে প্রাণিজ আমিষের চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে মত্স্য উত্পাদন ৩২.২ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে। উন্মুক্ত জলাশয়ে পোনা অবমুক্তকরণ কার্যক্রমকে আরো জোরদার করা হয়েছে। দেশের নদ-নদী ও জলাশয়ে মাছের অভয়াশ্রমের সংখ্যা ৫০০ তে উন্নীত করা হয়েছে। এর ফলে ১২টি বিলুপ্তপ্রায় মত্স্য প্রজাতির পুনরাবির্ভাব ঘটেছে। ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করা হয়েছে। চিংড়ি খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সাথে সাথে মত্স্য খাত ভিত্তিক ই-সেবা প্রদানের সুযোগও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। কিন্তু মত্স্যখাতে খামারিরা গত পাঁচ বছর ধরে জানিয়ে আসছে একই দাবি, তা হল মত্স্য খাতকে কৃষির সমপরিমাণ গুরুত্ব দেয়া হোক। ভূমি কর প্রত্যাহার করা হোক, বিদ্যুত্ বিল কৃষি খামারের হিসেবে গণ্য করা হোক। দেশের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে মত্স্য চাষ সিংহভাগ অবদান রাখলেও খামারিদের দাবি ও প্রত্যাশা বারবারই মূল্যায়ন হচ্ছে না।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আন্তর্জাতিক আদালতের রায় প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে বঙ্গপোসাগরে বাংলাদেশের নতুন সমুদ্র সীমানা নির্ধারিত হওয়ায় বর্তমানের ১ লক্ষ ৬৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার বাইরে আরো ১ লক্ষ ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার উপর আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সম্প্রসারিত এলাকায় নতুন নতুন মত্স্য আহরণ ক্ষেত্র চিহ্নিত করার মাধ্যমে এ খাতে অপার সম্ভবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। উপযুক্ত গবেষণা, আইনি কাঠামো ও প্রণোদনার ফলে আগামী বছরে এই উত্পাদন আরো বৃদ্ধি পেয়ে মেস্যর উত্পাদন ৩৪ লক্ষ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। উল্লেখ্য যে, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট শীর্ষক কার্যক্রমের আওতায় গত কয়েক বছর ধরে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উত্পাদন বৃদ্ধি ও উন্নয়নের প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী আশা জাগানিয়া কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, দুধের উত্পাদন দাঁড়াবে ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন, মাংসের উত্পাদন দাঁড়াবে ২০ লক্ষ মেট্রিক টন এবং উত্পাদিত ডিমের সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৯১ কোটি। নানা প্রণোদনা প্রদান করেও দুধের উত্পাদন এখনো চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশে স্থবির হয়ে আছে। কিন্তু এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা যে সংকট মোকাবিলা করছেন, সে সংকটগুলো সমাধানে কোনো বরাদ্দ ও নির্দেশনা নেই বাজেটে। দুধের আমদানি শুল্ক কয়েক বছর ধরে লাগাতারভাবে কমানোর কারণে দেশের খামারিরা চরমভাবে মার খাচ্ছে। মার খাচ্ছে দুগ্ধ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা ও শিল্প মালিকরা। দেশের মোট ব্যবহার হওয়া দুধের মাত্র ১৬ ভাগ আমদানি করা গুঁড়ো দুধের ওপর নির্ভরশীল হলেও সেই আমদানি খাতকেই বরাবর উত্সাহিত করা হচ্ছে। অন্যদিকে দেশে গুঁড়ো দুধ উত্পাদনের যথেষ্ট সাধ্য থাকলেও কোম্পানিগুলো দুধ বিক্রি করতে পারছে না। খামারিদের কাছ থেকে কিনতে পারছে না দুধ। সার্বিকভাবে কৃষি খাত নিয়ে কৃষক ও খামারিরা এবারের বাজেটে যে আশায় বুক বেঁধেছিলেন, তার তেমন সাড়া নেই অর্থমন্ত্রী ঘোষিত ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে। বাজেটে যে সমস্যা ও সংকটের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন, বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার আগেই সেগুলো সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

মধুমতির চরে বাদাম চাষ ''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

মধুমতি। আগের সেই ছুটে চলার দিন আজ আর নেই। নাব্যতা হারিয়ে নদীর বুকে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে জেগে উঠেছে বিশাল চর। পলি জমে উর্বর এ চর হয়েছে চাষযোগ্য। নদী পাড়ের ভাঙন কবলিত দিশেহারা হাজারো মানুষের স্বপ্নগাঁথা এ চরে সৃষ্টি হয়েছে সবুজের বিপ্লব। চরের যেদিকে তাকানো যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। এ সবুজ দেখা যাবে নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদীর পাড়ে গেলে। এ বছর বাদাম চাষ নতুন স্বপ্ন সম্ভারে মাতোয়ারা করেছে নদী পাড়ের সহস্রাধিক কৃষককে। দিগন্ত বিস্তৃত এ চরে শত শত কৃষক বিঘার পর বিঘা জমিতে বাদামের চাষ করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তনের পাশাপাশি দেশের তেল ও আমিষের ঘাটতি পূরণেও বড় ভূমিকা রাখছে।
মধুমতি নদী পাড়ের বিভিন্ন গ্রামের দশ হাজার ভাঙন কবলিত কৃষক সর্বস্ব হারিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছিল। কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা না থাকায় এক সময় সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশায় কেটেছে তাদের দিন। মধুমতির বুকে জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ চর তাদের এখন আবার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে। এসব চরে বাদাম চাষের কারণে নদীভাঙা মানুষের মুখে এখন সুখের হাসি। পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে তাদের জীবনযাত্রায়। কালনা গ্রামের রশিদ মিয়া জানান, “এ বছর ফলন ভাল হইছে। দাম ভাল পাব মনে হয়। আমরা বাদাম বিক্রি করে দুডে পয়সা দেখতি পারবো, ছয়াল মেয়ে নিয়ে প্যাট ভরে খাতি পারব।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা  রঘুনাথ কর জানান, এ অঞ্চলের মাটি বাদাম চাষের জন্য উপযোগী। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে ফলনও ভাল হবে। বাদাম চাষে চাষিদের যেকোনো সমস্যা হলে আমরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছি। তারাও আসছে আমাদের কাছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সব মিলিয়ে চরে ২ হাজার হেক্টর আবাদি জমিতে এখন বাদামসহ নানা ফসলের চাষ হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়া হতে পারে বাংলাদেশি ফুলের নতুন বাজার

ত ২৬ এপ্রিল থেকে ১৩ মে ২০১২ পর্যন্ত দীর্ঘ ১৮ দিনব্যাপী দক্ষিণ কোরিয়াস্থ গো-ইয়াং শহরে একটি আন্তর্জাতিক ফুল প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মেলায় বিশ্বের ৫৪টি দেশ অংশগ্রহণ করে। দক্ষিণ কোরিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে  ও সার্বিক সহযোগিতায় মেলায় বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি ফুল ও ফুলের চারা নিয়ে অংশগ্রহণ করে শাহ নার্সারি। অন্যান্য স্টলগুলোতে গন্ধহীন ফুল প্রদর্শিত হলেও বাংলাদেশের ফুলে ছিল সুগন্ধ; যার কারণে হাজার হাজার দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণের মধ্যে বাংলাদেশের শাহ নার্সারিটি ছিল শীর্ষে। বিশেষ করে রজনীগন্ধার গন্ধ তাদের বিমোহিত করে। সে দেশের ফুল ব্যবসায়ীরা এ দেশ থেকে রজনীগন্ধা ও জারবেরা ফুল আমদানির ব্যাপারে খুবই আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রদর্শনী চলাকালীন সময়ে শাহ নার্সারির স্বত্ত্বাধিকারী ড. শাহ সাইফুল ইসলামের সাথে কয়েকজন কোরিয়ান ফুল ব্যবসায়ীর বাণিজ্যিক বৈঠক হয় যা অত্যন্ত ফলপ্রসূ। কোরিয়াতে একযুগ বসবাসরত ফুল ব্যবসায়ী প্রবাসী বাংলাদেশি দোলন দাস জানান, কোরিয়াতে বাংলাদেশি ফুলের বাজার খুব ভাল। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রচণ্ড শীত থাকার কারণে এখানে ফুলের চাষ কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। এ সময় বাংলাদেশি ফুল এখানে আসলে তার কদর বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানান, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ কোরিয়াতে আন্তর্জাতিক ফুল প্রদর্শনীতে প্রথমবারের মত অংশগ্রহণ করে। এ বছরও করেছে। এ ধরনের প্রদর্শনী রফতানি বাণিজ্যের সম্ভবনা প্রসারিত করার সাথে সাথে দেশের সংস্কৃতিকেও বিদেশীদের সামনের তুলে ধরতে সহায়তা করছে।
গো-ইয়াং আন্তর্জাতিক ফুল মেলা কর্তৃপক্ষ মেলার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বাংলাদেশি স্টলের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বিশেষ সার্টিফিকেট প্রদান করেছে।

Bangladesh Agriculture at a Glance

Total family : 17,600,804
Total farm holding : 15,089,000
Total area : 14.845million hectare
Forest : 2.599 million hectare
Cultivable land : 8.44 million hectare
Cultivable waste : 0.268 million hectare
Current fellow : 0.469 million hectare
Cropping intensity : 175.97%
Single cropped area : 2.851 million hectare
Double cropped area : 3.984 million hectare
Triple cropped area : 0.974 million hectare
Net cropped area : 7.809 million hectare
Total cropped area : 13.742 million hectare
Contribution of agriculture sector to GDP : 23.50%
Contribution of crop sector to GDP : 13.44%
Manpower in agriculture : 62%
Total food crop demand : 23.029 million metric ton
Total food crop production : 27.787 million metric ton
Net production : 24.569 million metric ton

Bangladesh Agriculture the largest producing sector of economy. Agricultural holdings in Bangladesh are generally small. Rice, Jute, Sugarcane, Potato

Over 80% of Bangladesh's workforce is rural, yet the vast majority are extremely poor, illiterate and politically marginalized. These farmers live in harsh and degrading conditions, earning a pittance working for landlords. Their situation is worsened through an absence of political and social awareness and a lack of capacity to defend their rights. As a result of this they are often exploited and oppressed. Women face an even more difficult situation due to the persistence of conservative religious structures that serve to oppress women, and LRC works to increase women's awareness and rights and campaigns to eliminate the discrepancy between treatment of women and men. Both War on Want and LRC believe literacy is a catalyst for the empowerment of the rural labourers and small farmers. LRC's literacy programme and rights training workshops provide workers with the means to organise themselves and to improve their educational and practical skills, both of which will equip them to better demand that their rights to be respected

আউশ-আমনের রোগ-বালাই

আমন রোপন মৌসুম আসন্ন। ইতিমধ্যে বীজতলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জেলার অনেক স্থানে বীজতলার চারা বেশ বড়ও হয়েছে। বৃষ্টিহীনতার কারনে অনেক চাষী আউশ রোপণ করতে পারেননি। তবে গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাত হতে শুরু করেছে। আগামীতে আরো বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। আমন চাষ বৃষ্টি নির্ভর হওয়ায় উৎপাদন খরচ কম বিধায় চাষীরা আমন মৌসুমকে বেশ একটা গুরুত্ব দেন না। কিন্তু আমাদের চাই তিন মৌসুমেই সমান ফলন। আমনের ফলন স্বাভাবিক রাখতে এর রোগবালাই প্রতিরোধ করা অতি জরুরী। কেননা নানা রোগের আক্রমনের ফলে আমন ধানের ৩০ ভাগ ফলন থেকে বঞ্চিত হয় কৃষক। আমন মৌসুমে নানা রোগ-বালাইর আক্রমন ঘটে। তবে সময়মতো রোগ নির্ণয় করতে না পারার কারণে ৩০ ভাগ ফসল বিনষ্ট হয়। কৃষকের অজ্ঞতা বশত ধানে নানা প্রকার রোগের আক্রমন ঘটে। রোগাক্রান্ত ধান ক্ষেতের ফলন কখনও আংশিক আবার কখনও সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়। তবে রোগের কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার ব্যবস্থপানা জানা থাকলে কৃষক নিজেই তার ক্ষেতের রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। নিচে ধানের নানা রোগ, সনাক্তকরণ, এবং প্রতিকার ব্যবস্থাপনা উল্লেখ করা হলো। টুংরোঃ এ রোগ আউশ এবং আমন মৌসুমে অর্থাৎ মে-অক্টোবর মাসের যে কোন সময় আক্রমন করতে পারে। ধানের কুশি এবং ফল অবস্থায় সাধারণত টুংরো রোগ হয়। ধান ক্ষেতে টুংরো রোগ হলে গাছ ছোট হয়ে যায় বা বসে যায়। পাতহা হলদে, কমলা বা কচি পাতা কুকড়ে যায়। ব্ল¬াষ্টঃ বোরো, রোপা আমন ও আউশ ধানে সাধারণত এ রোগ হয়। মার্চ থেকে নভেম্বর মাসে ধান ক্ষেতে এ রোগ আক্রমন করে। আক্রান্তের মাত্রা ক্ষতির সীমা ছাড়িয়ে গেলে ক্ষেতের ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়। স্বভাবিক আক্রমনে ৩০ থেকে ৭০ ভাগ ফসল বিনষ্ট করতে সক্ষম। এ রোগ সাধারণত ধানের পাতা, গিট এবং শীষে আক্রমন করে। পাতায় আক্রমন হলে পাতা সাদা, ছাই রঙা বা বাদামী রঙের হয়ে যায়। গিটে আক্রমন হলে গিট কালো হয়ে পচে যায় এবং গিট থেকে ধান কনে পড়ে। শীষে আক্রমন হলে শীষ বা শীষের শাখা-প্রশাখার গোড়া কালো হয়ে শুকিয়ে ঝরে পড়ে। খোল পোড়াঃ আউশ এবং আমন ধানে সাধারণত এ রোগ হয়। মে, নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে এ রোগ ধান ক্ষেতে আক্রমন করে। এ রোগ সাধারণত কুশি অবস্থায় ধান ক্ষেতে আক্রমন করে। এ রোগের আক্রমন হলে ধানের খোলে জলছাপের মতো দাগ পড়ে, গোখরা সাপের চামড়ার মতো দেখায়। এ রোগের আক্রমন হলে ধানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বিঘ্নিত হয়। ফলন হ্রাস পায়। পাতা পোড়াঃ আউশ, আমন এবং বোরো ধানে এ রোগ হয়। মে, মধ্য আগষ্ট-সেপ্টেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসের যে কোন সময় এ রোগ ক্ষেতে আক্রমন করতে পারে। পাতা পোড়া রোগ সাধারণত চারা ও কুশি অবস্থায় ক্ষেতে আক্রমন করে। পাতা পোড়া রোগে ধান আক্রান্ত হলে পাতা ও কুশি সম্পূর্ন পচে যায় এবং গন্ধ বের হয়। আবার পাতার অগ্রভাগ থেকে কিনারা দিয়ে পাতা শুকিয়ে খড়ের মতো হয়ে যায়। উফরাঃ আমন ধানের অন্যতম রোগ উফরা। সাধারণত অক্টোবর মাসে এ রোগের প্রদুর্ভাব গটে। এ রোগ ধানের যে কোন অবস্থায় ক্ষেতে আক্রমন করতে পারে। এ রোগের আক্রমন হলে ধানের গাছ ছোট হয়ে যায়। পাতা ও খোলের সংযোগ স্থলে বাদামী দাগ পড়ে, পাতা শুকিয়ে যায়, ধানের কুশি সম্পূর্ণ বের হতে পারে না আংশিক বের হয় আবার কখনও শুকিয়ে যায়।
প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনাঃ ধানের ক্ষেতে নানা রোগ বালাই যেমন সহজেই আক্রমন করে অনুরুপ খুব সহজেই এসব রোগ প্রতিরোধ করা যায়। উপরোল্লি¬খিত রোগ প্রতিরোধ করতে জমিতে সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। আক্রান্ত ফসলী জমিতে ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। জমিতে স্বভাবিক পানি ধরে রাখতে হবে। বীজ শোধন করে নিলে রোগের আক্রমন কম হয়। আক্রান্ত ক্ষেতের রোগ দমনের জন্য ১০ লিটার পানিতে ১০ গ্রাম কপার অক্সিক্লোরাইড মিশিয়ে প্রতি আড়াই শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া আক্রান্ত ক্ষেতে হেক্টর প্রতি ৮০০ মিলি হিনোসান বা আড়াই কেজি হোমাই বা টপসিন এম প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া যেতে পারে। জমি চাষ কালে ক্ষেতে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। স্থানীয় জাতের তুলনায় উচ্চফলনশীল বা হাইব্রিড বীজের রোগ-বালাই বেশি হয়। তবে এ সব রোগ প্রতিরোধের জন্য সুষম সার ব্যবহারের পাশাপাশি জৈব সার ব্যবহার করে, জমিতে বছরে যে কোন সময় স্বল্পকালের জন্য ধৈনচা চাষ করে রোগ বালাই’র আক্রমন প্রতিহত করা যায়, এবং রোগমুক্ত বীজ বাছাই পূর্বক চাষ করলে সব ধরনের রোগ দুর করা যায়। (তথ্যসুত্র-বাংলাদেশ পরমানু/কৃষি গবেষণা ইন. ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া)

খাদ্য নিরাপত্তায় খরাসহিষ্ণু ধান,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা খরাপ্রবণ অঞ্চলে পরিণত হচ্ছে। এই মুহূর্তে ১ মিলিয়ন হেক্টরের বেশি জমি ইতোমধ্যেই খরাকবলিত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে এবং তা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আবার অসময়ে বৃষ্টিপাত এবং বিলম্বিত বর্ষার কারণে কৃষকরা উপযুক্ত সময়ে আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারছে না। আবার অঙ্গজ বৃদ্ধির পর্যায়ে বা ফুল আসার সময়ে অথবা দানা বাধার সময়ে প্রয়োজনীয় বৃষ্টি না হলে ধানের ফলন আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে। খরার মাত্রা বেশি হলে অনেক সময় সম্পূর্ণ ফসলই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই প্রতিকূল অবস্থার সাথে খাপ খেয়ে কাংখিত মানের ফসল চাষাবাদ করতে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইরি) সহায়তায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ধান ৫৬ নামে একটি খরাসহিষ্ণু স্বল্পমেয়াদি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে, যা খরা মোকাবিলায় যথেষ্ট কার্যকর বলে বিভিন্ন গবেষণা ও কৃষকের মাঠে প্রমাণিত হয়েছে। এই জাতটির বীজ বপণের ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যেই ধান কাটা যায়। সে কারণে কৃষক কার্তিক মাসের আকালের সময়েই এই ধান ঘরে তুলতে পারবে। কৃষকের মাঠে খরা মোকাবিলায় অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত ধানের এই জাতটি (লাইন নম্বর আই আর ৭৪৩৭১-৭০-১-১) ভারতে ২০০৯ সালে শাহবাগী ধান এবং ২০১০ সালে নেপালে সুকা ধান ৩ নামে অনুমোদন পায়, যা এখন ভারত ও নেপালের খরাপ্রবণ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় বীজ বোর্ড ২০১১ সালে ব্রি ধান ৫৬ নামে এই জাতটিকে অনুমোদন দেয়। বাংলাদেশের কৃষক খরাপ্রবণ অঞ্চলে আমন মৌসুমে এই জাতের ধান চাষাবাদ করে কাংখিত মানের ফসল ঘরে তুলতে পারবে।

ইরি ও ব্রির সহায়তায় স্ট্রাসার বিভিন্ন প্রকল্পে আরডিআরএস দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে খরাপ্রবণ অঞ্চলে গত দুই মৌসুম ধরে এই জাতটির খরাসহিষ্ণুতা পর্যবেক্ষণ করেছে এবং কৃষকের মাঠে নতুন উদ্ভাবিত এই জাতটির গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণিত হয়েছে। প্রচলিত জাতের আমন ধান মাটির প্রকারভেদে যেখানে ৮ থেকে ১২ দিনের বেশি খরা সহ্য করতে পারে না, সেখানে ব্রি ধান ৫৬ জাতের ধান ২৭ দিন পর্যন্ত খরা সহ্য করতে পারে। তাই খরাতে যখন কৃষকের ফসল নষ্ট হচ্ছে, আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাবলয় ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে এই উদ্ভাবন আমাদের স্বস্তি দিচ্ছে। এই ফসলের আরেকটি গুণ হল- কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে পোকা-মাকড়ের যে উপদ্রব শুরু হয়, ব্রি ধান ৫৬ স্বল্পমেয়াদি হওয়ার কারণে পোকা-মাকড় উপদ্রব শুরু হওয়ার আগেই ধান কেটে ফেলা যায়। এতে কৃষক কীটনাশক প্রয়োগের খরচ থেকে রেহাই পায়, যা পরিবেশ সহায়ক। এছাড়াও স্বল্পমেয়াদি হওয়ার কারণে কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে খরার কবলে পড়ার আগেই যেহেতু এ ধান পেকে যায়, সে কারণে সম্পূরক সেচের প্রয়োজন হয় না বিধায় বাড়তি খরচ থেকেও কৃষক অব্যাহতি পায়।

উত্পাদন কলাকৌশল: সাধারণত খরাপ্রবণ এলাকায় এই ধরনের খরাসহিষ্ণু ধানের চাষ করতে কৃষকদের উত্সাহিত করা হয়। যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এখন বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই খরাজনিত সমস্যায় আমন ধান চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সে কারণে ব্রি ধান ৫৬ জাতের ধান চাষ বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই আমন মৌসুমে করা যেতে পারে। বিশেষ করে যে সমস্ত জমিতে রবিশস্যের চাষ করা হয়, সে সমস্ত জমিতে আমন মৌসুমে ব্রি ধান ৫৬ জাতের ধান চাষ করা উচিত। এতে কৃষক খরার সময়েও আমন ধানের কাংখিত ফলন পাবেন এবং পরবর্তী রবি ফসল সঠিক সময়ে চাষ করে বেশি ফলন ঘরে তুলতে পারবেন।

চাষ উপযোগী জমি: বেলে দো-আঁশ এবং এঁটেল দো-আঁশ উঁচু এবং মাঝারি উঁচু জমিতেও এই ধান চাষ করা যেতে পারে।

বীজ বাছাই ও শোধন: ভারী, পুষ্ট ও রোগ-বালাই মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।

বপনের আগে বীজ শোধন করা ভাল। হেক্টরপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ কেজি বা বিঘাপ্রতি ২.৫ থেকে ৩.০ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। এক কেজি বীজ শোধনের জন্য তিন গ্রাম ব্যাভিস্টিন এক লিটার পানিতে মিশিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখলে বীজ শোধন হয়।

বীজতলায় বীজ বপন: এক শতক পরিমাণ বীজতলায় ৩.৫ থেকে ৪.০ কেজি বীজ বপন করা যায়। এক শতক বীজতলার চারা দিয়ে প্রায় এক বিঘা জমিতে চারা রোপণ করা যাবে। ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই বীজতলায় বীজ বপন করা যাবে।

বীজতলা তৈরি: দো আঁশ ও এঁটেল মাটি বীজতলার জন্য ভাল। বীজতলার জমি অর্নুবর হলে প্রতি শতাংশ জমিতে ২ মণ পচা গোবর সার দিয়ে বীজতলা উর্বর করতে হবে। এরপর ৩ মিটার লম্বা ও ১ মিটার চওড়া বেড তৈরি করতে হবে। দুই বেডের মাঝখানে ২৫ থেকে ৩০ সেমি নালা রাখতে হবে যা বীজতলায় পানি দিতে এবং প্রয়োজনে পানি নিষ্কাশনের জন্য সহজ হয়।

রোপণের জন্য জমি তৈরি: জাতটির চাষাবাদ পদ্ধতি অন্যান্য উফশী রোপা আমন জাতের মতই। জমি চাষে হেক্টরপ্রতি ৩ থেকে ৫ টন পরিমাণ জৈব সার (গোবর সার বা পচা আর্বজনা) দিলে ভাল ফলন পাওয়া যাবে।

চারা রোপণ: জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ অর্থাত্ শ্রাবণের প্রথম সপ্তাহ থেকে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ২০ থেকে ২২ দিনের চারা রোপণ করতে হবে। যেহেতু এই ধান স্বল্পমেয়াদি, তাই ২০-২২ দিনের বেশি বয়সের চারা রোপণ করলে ফলন কম হবে। প্রতি গুছিতে ২ থেকে ৩টি চারা রোপণ করতে হবে। বেশি গভীরতায় চারা রোপণ করলে চারার বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং কুশির সংখ্যাও কমে যায়। সারিবদ্ধভাবে চারা রোপণ করতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০ সেসি এবং প্রতি

সারিতে চারা থেকে চারার দূরত্ব ১৫ সেমি বজায় রাখতে হবে। তবে অনুর্বর মাটির ক্ষেত্রে রোপণের দূরত্ব একটু কমানো যেতে পারে।

সার প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনা: জমি প্রস্তুতের সময় সবটুকু টিএসপি, অর্ধেক পটাশ সার, অর্ধেক জিপসাম এবং অর্ধেক জিংক সালফেট সার একসাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সার সমান দুই কিস্তিতে অর্থাত্ রোপণের ১০ দিন পর ১ম কিস্তি, ২০ থেকে ২৫ দিন পর ২য় কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক পটাশ সার ২য় বার ইউরিয়া উপরি প্রয়োগের সাথে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক জিংক সালফেট ১ম কিস্তি ইউরিয়ার সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। সালফারের অভাব পরিলক্ষিত হলে জিপসাম ইউরিয়ার মত উপরি প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া উপরি প্রয়োগের সময় জমিতে যেন ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার পানি থাকে ইউরিয়া প্রয়োগের সাথে সাথে আগাছা পরিস্কার করতে হবে যাতে সার মাটিতে ভালভাবে মিশে যায়। আগাছা দমন, ক্ষতিকর পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাই দমন করতে হবে। বীজ বপনের ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে এই ধান পেকে যায়। ৮০ ভাগ ধান পেকে গেলে ধান কেটে ফেলা উচিত। ধানের বীজ সংগ্রহের জন্য ফসল কাটার পূর্্বে জমি থেকে আগাছা এবং অন্য ধানের জাত তুলে ফেলতে হবে। এরপর বীজ হিসেবে ফসল কেটে আলাদাভাবে মাড়াই, ঝাড়াই ও ভালভাবে রৌদ্রে শুকাতে হবে, যাতে আদ্রর্তা শতকরা ১২ ভাগের নিচে থাকে। তারপর পুষ্ট ধান বাছাই করে প্লাস্টিক ড্রাম বা কেরোসিনের টিন ভালভাবে পরিস্কার করে শুকিয়ে রৌদ্রে শুকানো বীজ ঠাণ্ডা করে পাত্রে রাখতে হবে।

ঠিকমতো চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ৫টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এই ধানগাছ শুষ্কতা সহ্য করতে পারে, কিন্তু ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারে না। সেজন্য কোনোভাবেই এই ধানের জাত দেরীতে চাষাবাদ করা যাবে না। এছাড়া বোরো মৌসুমেও চাষ করা যাবে না।

Introduction