Sunday, June 17, 2012

গ্যানোডার্মা মাশরুমের চাষ ব্যবস্থাপনা







গ্যানোডার্মা মাশরুম বিশ্বে অমরত্বের মাশরুম নামে পরিচিত। বিশেষ করে চীন, জাপান কোরিয়া ও মালয়েশিয়াতে হার্বাল মেডিসিন হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। ক্যান্সার, এইডস, হূদরোগের মত বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগের নিয়ন্ত্রণে গ্যানোডার্মা মাশরুমের কদর রয়েছে। জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সমপ্রসারণ কেন্দ্র কর্তৃক উত্পাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন হওয়ায় ৭টি আবাদযোগ্য জাত রয়েছে যা বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ায় চাষ উপযোগী। বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ শুরু হয়েছে।
গ্যানোডার্মার বীজ উত্পাদন: মাশরুমের অঙ্গজ বীজ অর্থাত্ স্পন তৈরির জন্য প্রধান উপাদান  হিসেবে কাঠের গুঁড়ো, আখের ছোবরা, ভুট্টার খড় ব্যবহার করা যায়, এর সাথে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে গমের ভূষি, চালের কুঁড়া, ভুট্টার গুঁড়ো প্রভৃতি ব্যবহার করা যায়।
জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সমপ্রসারণ কেন্দ্র  কাঠের গুঁড়ো, গমের ভূষি ও চালের কুঁড়া দিয়ে অত্যন্ত সহজে স্পন তৈরি করছে যাতে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
সাবস্ট্রেট ফরমুলেশন ও স্পন তৈরি: ফরমুলেশন-১: কাঠের গুঁড়ো- ৭০%, গমের ভূষি-২৫%, ধানের তুষ-০৫%, ক্যালসিয়াম কার্বনেট-০.২%, পানি- ৫০ থেকে ৬০%।
ফরমুলেশন-২: কাঠের গুঁড়ো- ৭০%, চালের কুঁড়া ২২.৫%, ধানের তুষ-২.৫%, ক্যালসিয়াম কার্বনেট-০.২%, পানি- ৫০ থেকে ৬০%। উল্লেখিত উপাদানগুলো ভালভাবে মিশিয়ে পিপি ব্যাগে ১ কেজি অথবা আধা কেজি
করে ভরে প্লাস্টিক নেক দিয়ে বেঁধে কাঠের কীলক দ্বারা প্যাকেটের মুখে গর্ত করে দিতে হবে। এরপর কটনপ্লাগ দিয়ে মুখ বন্ধ করে ব্রাউন পেপার এবং রাবার ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। এরপর অটোক্লেভ মেশিনে ১২০০ সে. তাপমাত্রায় ১.৫ কেজি/ঘন ইঞ্চি বাষ্প চাপে ২ ঘণ্টা রেখে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। প্যাকেট ঠাণ্ডা হলে ল্যাবরেটরিতে ক্লিনবেঞ্চে জীবাণুমুক্ত অবস্থায় মাদার কালচার  দিয়ে উক্ত প্যাকেটে ইনোকুলেশন করতে হবে। ইনোকুলেশনকৃত প্যাকেটগুলোকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন অন্ধকার ঘরে ২৮ থেকে ৩৫০ সে. তাপমাত্রায় মাইসেলিয়াল কলোনাইজেশনের জন্য রেখে দিতে হবে। এভাবে ২০
থেকে ২৫ দিন রাখার পর মাইসেলিয়াম দ্বারা প্যাকেট পূর্ণ হবে যা পরবর্তীতে চাষ ঘরে ব্যবহূত হবে।
প্যাকেট কাটা: গ্যানোডার্মা মাশরুমের স্পন প্যাকেট বিভিন্নভাবে কাটা যায়। চাষ ঘরে প্যাকেট বসানোর আগে মাইসেলিয়াম পূর্ণ স্পন প্যাকেট হতে নেক, তুলা, ব্রাউন পেপার ইত্যাদি খুলে প্যাকেটের মুখ রাবার ব্যান্ড দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে। কোণাযুক্ত প্যাকেটের একপাশে মাঝ বরাবর এক বর্গ সে.মি. আকারে পিপি কেটে ব্লেড দিয়ে সাদা অংশ চেঁছে ফেলতে হবে। এরপর চাষ ঘরের তাকে সারি সারি করে বসিয়ে দিতে হবে। স্পন প্যাকেট হতে নেক, তুলা, ব্রাউন পেপার ইত্যাদি খুলে প্যাকেটের মুখ খোলা রেখে দিয়েও মাশরুম চাষ করা যায়। চাষ ঘরের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের কৌশল থাকলে স্পন প্যাকেটের উপরের পুরো মুখ খুলে দিয়ে ও মাশরুম চাষ করা যেতে পারে।
পরিচর্যা: প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য দিনে ৩ থেকে ৪ বার মৃদু পানি সেপ্র করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কোনো অবস্থায় আর্দ্রতার পরিমাণ কমে না যায়। এভাবে পরিচর্যা করলে ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই সাদা শক্ত মাসরুমের কুড়ি , ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে আঙুলেরমত লম্বা হয়ে লালচে বর্ণের এবং ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে অগ্রভাগ হাতের তালুরমত চ্যাপ্টাকৃতি ধারণ করবে। এই অবস্থায় চাষ ঘরের আলো ও বায়ু চলাচল বাড়িয়ে দিতে হবে।
মাশরুম সংগ্রহ: ঘরে বসানোর দের মাসের মধ্যেই মাশরুম সংগ্রহ করা যায়। পরিপক্ক ফ্রুটিং বডি সংগ্রহের উপযোগী লক্ষণ হল মাসরুমের কিনারার বৃদ্ধি থেমে গিয়ে চকচকে লাল বর্ণ ধারণ করে এবং অসংখ্য লালচে স্পোর নিচে পরতে দেখা যায়। পরিপক্ক ফ্রুটিং বডি তুলে নেওয়ার পরে প্যাকেটের কাটা স্থানে একটু চেঁছে দিলে খুব দ্রুত দ্বিতীয় বার ফলন পাওয়া যায়। এভাবে নিয়মিত পরিচর্যা করলে প্রতি প্যাকেট হতে ৩ থেকে ৪ বার ফলন পাওয়া সম্ভব। প্রতি কেজি স্পন থেকে ৭০ থেকে ৯০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যায়।
সংরক্ষণ: গ্যানোডার্মা মাশরুম সংগ্রহ করে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে রোদে শুকাতে হবে। এরপর পিপি ব্যাগে বা বোতলে ভরে বায়ুরোধী অবস্থায় ২ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এছাড়া স্লাইস বা পাউডার করেও অনেক দিন রাখা যায়। ৩.০-৩.৫ কেজি তাজা মাশরুম শুকালে ১ কেজি শুকনো ঋষি মাশরুম পাওয়া যায়।
ব্যবহার: মাশরুম পাউডার করে বা স্লাাইস করে কেটে পানিতে মৃদু তাপে জ্বাল দিয়ে মাশরুমের নির্জাস বের করে লেবুর রসসহ গরম-গরম অথবা ঠাণ্ডা করে খাওয়া যায়।
 

নারিকেল চাষে নিতে হবে বাণিজ্যিক উদ্যোগ

মৌলভীবাজারে বেড়ে গেছে নারিকেলের চাহিদা আর এ সুযোগে বাজারে বেড়ে গেছে এর দামও। তবে মৌলভীবাজারের মাটি বাণিজ্যিকভাবে নারিকেল চাষের অনুকূলে না থাকলেও এ এলাকায় বেড়েছে নারিকেলের উত্পাদন। জেলার মোট চাহিদার অর্ধেকের উপরে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন বসত-বাড়ির আঙিনা থেকেই পূরণ হচ্ছে। একই সাথে গরমে পানীয় হিসেবে ডাবের পানির শতভাগ চাহিদা এ জেলার উত্পাদন দিয়েই পূরণ হয়। বর্তমানে বাজারে নারিকেলের দাম অনেকটা বেড়ে গেছে। প্রতি জোড়া নারিকেলের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আর প্রতিটি ডাবের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা। এ ভাবে জেলার ৭ উপজেলার বাড়ি ঘর থেকে বছরে ৭ থেকে ৮ কোটি টাকার নারিকেল বিক্রি হয়, যা এ জেলার পরিবারগুলোর অতিরিক্ত আয়। আর এটি যদি সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক মনোভাবে করা হয়  তাহলে বছরে নারিকেল বিক্রি করে এ জেলাবাসী আয় করবে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা। আর জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর আগামীতে যাতে নারিকেল চাষে যত্নবান হন সে লক্ষ্যে শুধু নারিকেলের জন্য উদ্বুদ্ধকরণ সভাসহ নিয়মিত পরামর্শ প্রদান আরো জোরদার করবে বলে জানায়।
জেলার পাহাড়ি ও সমতল প্রায় সব গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই দুই তিনটি করে নারিকেল গাছ রয়েছে, যা পরিবারের চাহিদা পূরণের পর তারা বাজারে বিক্রি করে দেন। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে বেশ কিছু কৃষক তাদের বাড়ির নারিকেল বিক্রি করে বছরে ৫০ থেকে এক লক্ষ টাকা আয় করেন। এদের মধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুর খান ইউনিয়নের মন্দীর গাঁওয়ের মৌলানা মো. মুজিবুর রহমান আল মাদারী একজন। তাদের বাড়ির শতাধিক নারিকেল গাছ থেকে বছরে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার নারিকেল বিক্রি হয়। তবে এ এলাকায় বিশেষ করে নারিকেল বিক্রির টাকা পেয়ে থাকেন গৃহকর্তরা। অনেক বিত্তবান পরিবারের গৃহকর্তারাও নারিকেল ও ডাব বিক্রি করেন। তবে এ এলাকার গৃহস্থদের নারিকেলের উত্পাদনের বাণিজ্যিক মন-মানসিকতা না থাকায় এ জেলা উত্পাদনের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। কিন্তু তারা যদি একটু যত্নবান হয়ে নারিকেল গাছ লাগান এবং যত্ন নেন তাহলে এ এলাকার শতভাগ চাহিদা পূরণ করে জেলার বাইরেও বিক্রি করা যাবে বলে জানালেন জেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে নারিকেলের চাষ হচ্ছে যা থেকে বছরে উত্পাদন হয় ৮৯ হাজার মেট্রিক টন। সামান্য যত্নে বছরে একটি নারিকেল গাছে ৬০ থেকে ৭০টি নারিকেল ধরে। আর সঠিক যত্ন নিলে তা ১০০ ছাড়িয়ে যায়। একটি পরিবারে ৫/৬টি নারিকেল গাছ থাকলে নিজের চাহিদা পূরণ করে বছরে অতিরিক্ত ১০/১৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আর একটি নারিকেল গাছ বাড়িতে কোনো রকমে টিকে গেলে এটি এক নাগারে ৭০/৮০ বছর ফল দিয়ে থাকে। যার উপকার পেতে পারেন তিন পুরুষ।
নারকেলের রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার ও ভেষজ গুণাগুণ। ডাবের পানিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসসহ একাধিক পুষ্টি গুণ। নারিকেলের শাঁশ দিয়ে বাঙালি নারীরা নানা রকমের মুখরোচক খাবার তৈরি করে থাকেন। এছাড়া নারিকেলের তেল চুলের জন্য মহৌষধ। এটি শুধু চুল নয় আমাদের ত্বককেও ভাল রাখে। অনেক দেশে নারিকেলের তেল রান্নায়ও ব্যবহার হয়।
নারিকেল গাছ সাধারণত ৮ থেকে ১০ মিটার দূরত্বে লাগাতে হয়। তবে অবশ্যই ৬ মিটারের কম হলে গাছ বাঁচানো কষ্টকর। নারিকেলের বেটে প্রজাতির গাছ ৬ মিটারের মধ্যে হলে সমস্যা হয় না । গাছ রোপণের ক্ষেত্রে যত কমবয়সী চারা হয় ততই ভাল।
নারিকেলের চারা রোপণের উত্তম সময় মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এর জন্য এক মিটার চওড়া ও এক মিটার গর্ত করে গর্ত থেকে উঠানো মাটিতে সার মিশিয়ে ৮/১০দিন রেখে রোদে শুকাতে হবে। পরে মাটির উপরিভাগ থেকে ১০ থেকে ১২ সেন্টি মিটারের নিচে চারা লাগাতে হবে। এসময় একটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে নারিকেলের উপরের অংশ কিছুটা যেন খোলা থাকে। বিশেষ করে বর্ষায় এর গোড়ায় যেন পানি জমতে না পারে।
নারিকেলে পটাশ জাতীয় সারের অভাবে ফুল দেরীতে আসে, অনেক সময় ফল ঝড়ে যায় এবং দেখা দেয় রোগ-বালাই। এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল কৃষি কর্মকর্তা সুকল্প দাশ জানান, শুকনো মৌসুমে কম বয়সে নারিকেল গাছে ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর পানি দিতে হয়। গাছ রোপণের ৫/৬ বছর পর থেকেই ফল আসতে শুরু করে। আর পূর্ণাঙ্গ বয়সে বছরে দুই বার সার দিলে ও নিয়মিত পরিচর্যা করলে এক একটি গাছে বছরে একশ’র উপরে ফল পাওযা যায়।
সবুজবাগ এলাকার গৌরাঙ্গ চক্রবর্ত্তী, প্রতাপ চন্দ, প্রণথ দাশ, দুলাল পাল ও কুহিনুর চৌধুরী জানান, নারকিল চাষ করে তারা নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর বছরে কয়েক হাজার টাকার নারিকেল বিক্রি করে থাকেন।
কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক আব্দুল জলিল মিয়া জানান, এই জেলায় প্রচুর প্ররিমাণে নারিকেল গাছ রয়েছে। কৃষকদের ডাকে তারা নারিকেল গাছের রোপণ প্রণালী ও পরিচর্যার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এর জন্য সরকারের আলাদা কোনো বাজেট নেই। বাজেট থাকলে নারিকেল গাছ ছাটাই ও পাড়ার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণে ব্যবস্থা করলে কৃষকরা আরো উপকৃত হত।
 

কৃষি বাজেট নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

মানিকগঞ্জের কৃষক সংগঠক এটিএম নুরুল হক বলেছেন, চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে যে বরাদ্দ ছিল সে বরাদ্দটা ঠিক সময় সরকার বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ভর্তুকির বড় একটি অংশ রয়ে গেছে। সেই অর্থ যদি আগামী বাজেটের সাথে যোগ করে দেয় এবং শক্ত মনিটরিং-এর মাধ্যমে তা সঠিকভাবে ব্যয় করা হয় তাহলে কৃষক উপকৃত হবে। বাজেটে কৃষি খাত কতটুকু মূল্যায়ন হয়েছে, এ প্রশ্নের জবাব নির্ভর করছে তার বাস্তবায়নের ওপর, সরকারের সদ্বিচ্ছার ওপর। কৃষি খাতের সাথে সরকারের যে অংশের সংশ্লিষ্টতা আছে তারা যদি উদ্যোগী হন তাহলে কৃষক উপকৃত হবেন। কৃষক অনেক সময় অর্থনীতিবিদদের কথা শুনে হতাশ হয়ে যান। আবার হিসেববিহীন প্রতিশ্রুতির কথা শুনে আশায় বুক বাঁধেন। আমি মনে করি, বেশি হতাশা ও বেশি আশা দুই-ই কৃষকের জন্য খারাপ। কৃষক হিসেবে আমরা আশা করব, সরকার যা বলবে, তা যেন কথার কথা না হয়, তা করে দেখাতে হবে। বাজেটে কী বরাদ্দ হল, সেখানে কৃষকের খুব বেশি মাথাব্যথা নেই। সরকার কীভাবে কৃষি ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য পরিকল্পনা নেবে, কৃষি কাজে কৃষককে সহযোগিতা করবে, সেটিই বড় কথা। কৃষি কয়েকটা ভাগে বিভক্ত। যেমন পশুসম্পদ, মত্স্যসম্পদ, পোল্ট্রি খাত। পোল্ট্রি খাতের অবস্থা আজ খুবই খারাপ। সরকার এই খাতটিকে আবারো দাঁড় করারনোর জন্য কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা বাজেট শুনে ও সাংবাদিকদের বিশ্লেষণ দেখে বোঝার উপায় নেই। আমি দাবি করব, কৃষি ও তার সঙ্গের সবগুলো উত্পাদন খাত নিয়ে সরকার গুরুত্বের সঙ্গে ভাববে।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনিস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষি বিশেষজ্ঞ রামেন্দ্র চৌধুরী বলেছেন, বাজেটের কৃষি খাতের প্রাপ্তি নিয়ে আলোচনার সময় এখানো আসেনি। বাজেট প্রস্তাবে আমরা শুধু একটা থোক বরাদ্দ দেখলাম ৭.৫ ভাগ। একটু জটিলতা আছে- বিভিন্ন পত্রিকায় পরিমাণটা বিভিন্ন রকমের দিয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন রকমের মন্তব্য করেছেন। যেমন একজন মন্তব্য করেছেন- কৃষিতে থোক বরাদ্দ কমেছে কিন্তু ভর্তুকি বেড়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভর্তুকি কমেছে। সুতরাং এটা যখন কৃষি মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় মিলে বিভিন্ন খাতে বন্টন ও বিভাজন করবে, তখন কথা বলার সময় আসবে। আর বাজেট ঘোষণার ঠিক পর পর এই সময়ে সরকারকে জানানো দরকার, আমরা কেমন বাজেট চাই। প্রথম কথা, গত বছর সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ছিল ভর্তুকি। আমি বলব- আমি কৃষিতে আরো বেশি ভর্তুকি চাই। শুনছি গতবারের ভর্তুকির তিন হাজার কোটি টাকা অব্যয়িত রয়ে গেছে। এ বছর পাঁচশ’ কোটি টাকা কমিয়ে ছয় হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু গতবারের তিন হাজার টাকা এটার সাথে যোগ করে বাস্তবায়িত করতে হবে। আর অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যাতে এই টাকাটা অব্যয়িত না থাকে। সরকারের একটি বিষয় পরিস্কার হওয়া প্রয়োজন, তা হল, কৃষিতে এক টাকা বিনিয়োগ করলে কৃষক তার কয়েকগুণ ফিরিয়ে দেয়। কৃষি মোট বাজেটের মাত্র ৭ দশমিক ৫ ভাগ বরাদ্দ পাচ্ছে, কিন্তু ফেরত দিচ্ছে জাতীয় আয়ের ২৪ ভাগের মতো। সেবা খাত মিলিয়ে কৃষকের এই দেয়ার হিসাবটা দাঁড়াবে ৪০ ভাগের ওপরে। তাহলে কৃষিতে বরাদ্দ বৃদ্ধির ব্যাপারে কুণ্ঠা থাকার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। দ্বিতীয়ত. কৃষি উন্নয়নের জন্য সরকারের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে কঠোর মনিটরিং -এর প্রয়োজন আছে। অন্য খাতের সঙ্গে এই খাতটির গুরুত্ব মেলানো ঠিক হবে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ইব্রাহিম খলিল বলেছেন, এবারের বাজেটে কৃষকদের উন্নয়নের কোনো দিক নির্দেশনা নেই। কৃষি খাতের বরাদ্দই বলে দেয়, কৃষকদেরকে আর্থিকভাবে এগিয়ে নেয়ার মত গুরুত্ব সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, এবারের বাজেটেও সরকার কৃষির প্রতি যথেষ্টই গুরুত্ব দিয়েছে। বরাদ্দের পরিমাণও খারাপ নয়। সরকার গত তিন বছরের বাজেটে বরাদ্দ, ভর্তুকি ও নির্দেশনার ক্ষেত্রে একটি ধারাবাহিকতা রেখে চলছে বলে আমি মনে করি। মত্স্য, পোল্ট্রিসহ গোটা প্রাণিসম্পদ খাতে বরাদ্দ বাড়েনি, তবে কমেছে তাও বলা যাবে না। একথা সত্য যে, আগামীর খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে কৃষি দিনের পর দিন চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে, তবে একথা সবাইকেই মানতে হবে যে, বাজেট দিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায় না। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, সুশাসন ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার। বাজেট সাধারণত প্রণীত হয় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায়। সে হিসেবে আগামী বাজেটে যে টাকা-পয়সাই বরাদ্দ থাক, তার সঠিক ব্যবহার এবং  সর্বস্তরে সুশাসন নিশ্চিত করার ওপর কৃষি ও কৃষকের ভাগ্য নির্ধারন হবে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশ্লেষণ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র গবেষণা সহযোগী তৌফিক উল ইসলাম বলেছেন, কৃষিতে যা ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে। হয় ভর্তুকি বাড়াতে হবে, নতুবা ইউরিয়া ও নন ইউরিয়া সারের দাম অনেক বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যদিকে কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও বাজেটে কোনো দিক নির্দেশনা নেই। শস্যবীমার ব্যাপারেও তেমন কোনো ফলোআপ নেই। এছাড়া ফসল সংরক্ষণের জন্য যে গুদাম পরিধি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে সেদিক থেকেও কার্যত পিছিয়ে আছি আমরা। এক্ষেত্রে ২০১৩ সালের যে লক্ষ্য তারা দিয়েছে তা পূরণও অনেকটা অসম্ভব। অন্যদিকে মত্স্য, পোল্ট্রি কিংবা সামগ্রিক প্রাণিসম্পদ খাতেও আশাব্যঞ্জক কিছু নেই।
সর্বোপরি প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষিতে বরাদ্দ থাকলে প্রাণিসম্পদ খাতে কোথায় কত বরাদ্দ তার কোনো উল্লেখ নেই। পোল্ট্রি শিল্পের দুর্দিনে খামারিদের পাশে দাঁড়াতে হবে, মত্স্য ও দুগ্ধ শিল্পে নিতে হবে কার্যকর উদ্যোগ। পাশাপাশি কৃষি পণ্যে ন্যায্যমূল্য দিতে হবে এমনটাই প্রত্যাশা কৃষক ও বিশেষজ্ঞদের।

Saturday, June 16, 2012

গৃহবর্জ্যে বছরে দুই লাখ টন সার,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

ঢাকার গৃহবর্জ্যে বছরে দুই লাখ টন সার হতে পারে

ঢাকা মহানগরের গৃহস্থালি বর্জ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ পচনশীল। এই বর্জ্য থেকে বছরে দুই লাখ ২০ হাজার টন পর্যন্ত জৈব সার হতে পারে, যার বাজারমূল্য প্রায় ২২০ কোটি টাকা।
এ ছাড়া পচনশীল বর্জ্য থেকে কয়েক লাখ ঘনফুট জ্বালানি গ্যাস, দুই লাখ টন কাগজের মণ্ড পাওয়া সম্ভব। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা ওয়েস্ট কালেকশন ফাউন্ডেশনের সভাপতি মনির হোসেন। ফাউন্ডেশনটি ঢাকা মহানগরে বেসরকারিভাবে বর্জ্য সংগ্রহকারী সংগঠনগুলোর ফোরাম।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপরিউক্ত তথ্য উপস্থাপন করে বলা হয়, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও বিনিয়োগ করে সহজেই বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা যায়। অনেক উন্নয়ন সহযোগী বা দাতা সংস্থা এই কাজে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। তাদের সেই আগ্রহ কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন ঢাকা সিটি করপোরেশন এবং সরকারের উদ্যোগ।
সংবাদ সম্মেলনে মেজর জেনারেল (অব.) আমিন আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব ঢাকা সবার স্লোগান। কিন্তু এখন পর্যন্ত পরিবেশবান্ধব ঢাকা প্রতিষ্ঠায় কার্যকর কোনো উদ্যোগ আমরা দেখতে পাইনি।’

কার্বাইড দিয়ে ফল পাকানো জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর

ফল আমাদের খাদ্য ও পুষ্টির অন্যতম উৎস। কিন্তু দেশের এক শ্রেণীর মধ্যসত্ত্বভোগী, মুনাফালোভী ব্যবসায়ী কৃত্রিমভাবে ফল পাকিয়ে ফলের খাদ্যমান বিনষ্ট করছে। হরহামেশা ক্যালসিয়াম কর্বাইডসহ বিভিন্ন প্রকারের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে আম, কলা, কাঁঠাল, আনারসসহ অন্যান্য আকর্ষনীয় ফল পাকানো হচ্ছে। এতে ক্রেতাসাধারণ ও ভোক্তা প্রতারিত হয়ে আর্থক এবং স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়ছে।
কার্বাইড কী?
ক্যালসিয়াম কার্বাইড এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ। এটি এক ধরনের যৌগ যা বাতাসে বা জলীয় সংস্পর্শে এলেই উৎপন্ন করে এসিটিলিন গ্যাস। যা ফলে প্রয়োগ করলে এসিটিলিন ইথানল নামক বিষাক্ত পদার্থে রুপান্তরিত হয়।
কিভাবে স্বস্থ্যের ক্ষতি করেঃ
কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল খেলে মানুষ দীর্ঘমেয়াদি নানা রকম রোগে বিশেষ করে বদহজম, পেটের পীড়া, পাতলা পায়খানা, জন্ডিস, গ্যাস্ট্রিক, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, লিভার ও কিডনি ন্ষট হওয়াসহ ক্যান্সারের মত জাটল রোগের সৃষ্টি হয়। এছাড়া মহিলারা এর প্রভাবে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দিতে পারে।

বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গোলাপ ফুলের চাষ।

গোলাপ ফুলকে ফুলের রাণী বলা হয়। রঙ, গন্ধ ও সৌন্দর্যের জন্য গোলাপ ফুল সবার কাছেই প্রিয়। এর ইংরেজি নাম Rose ও বৈজ্ঞানিক নাম Rosa sp. আমাদের দেশে নানান রঙ ও জাতের গোলাপ ফুল চাষ করা হয়ে থাকে। যেমন-ক্রিমশন গ্লোরি, পাপা-মাইল্যান্ড, টিপটপ, হানিমুন, সানসিল্ক, রোজিনা, গোল্ডেন ইত্যাদি। জাত ভেদে গোলাপ ফুলের রঙ, আকৃতি ও গন্ধ ভিন্ন হয়ে থাকে। আমাদের দেশের সাভার, যশোর, কুষ্টিয়া প্রভৃতি জায়গায় এখন ব্যবসায়িক ভিত্তিতে গোলাপ ফুল চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে।

বাজার সম্ভাবনাঃ

আমাদের দেশে সারাবছরই গোলাপ ফুলের চাহিদা থাকে। সৌখিন মানুষ তার ঘর সাজানোর জন্য ফুল ব্যবহার করে। এছাড়া বিয়ে, গায়ে হলুদ, বিভিন্ন সভা, সমাবেশ অনুষ্ঠানের স্থান ফুল দিয়ে সাজানো হয়ে থাকে। তাই বলতে গেলে সারাবছরই ফুলের চাহিদা থাকে। আমাদের দেশের প্রায় সব জেলা শহরে ফুলের দোকান দেখা যায়। এসব ফুলের দোকানে ফুল সরবরাহ করে আয় করা সম্ভব। এছাড়া গোলাপ ফুল চাষ করে দেশীয় বাজারে বিক্রয়ের পাশাপাশি ফুল বিদেশেও রপ্তানী করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে। রজনীগন্ধা ফুল বিদেশে রপ্তানি করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

গোলাপ ফুল উৎপাদন কৌশলঃ


চাষের উপযোগী পরিবেশ ও মাটি

অক্টোবর-নভেম্বর মাস চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। দীর্ঘস্থায়ী সূর্যের আলোযুক্ত খোলামেলা আবহাওয়া ফুল উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। মোটামুটি ঠান্ডা আবহাওয়ায় গোলাপ ভালো জন্মায়।গোলাপ চাষের জন্য পানি নিষ্কাশনের সুবিধাসহ বেলে দো-আঁশ, দো-আঁশ অথবা এঁটেল দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। মাটির পিএইচ ৬-৭ এর মধ্যে থাকা উচিত।

জাতঃ

গোলাপ ফুলকে অনেক শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে। তবে উল্লেখযোগ্য শ্রেণীগুলো হলো-

১. হাইব্রিড টি (Hybrid Teas) : এ শ্রেণীর ফুলগুলো বেশ বড়, সুগঠিত ও অনেক পাপড়িবিশিষ্ট। কাটা ফুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ক্রিমশন গ্লোরি, পাপা-মাইল্যান্ড, টিপটপ ইত্যাদি এ শ্রেণীর জাত।

২. ফ্লোরিবান্দা (Floribunda) : এ শ্রেণীর ফুলগুলো আকারে ছোট এবং থোকায় ধরে। কতকগুলো জাত কাঁটা ফুলের জন্য চাষ করা হয়। হানিমুন, সানসিল্ক, টিপটপ ইত্যাদি এ শ্রেণীর জাত।

৩. পলিয়েন্থা (Polyantha) : এ শ্রেণীর ফুলগুলো আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট এবং বড় বড় থোকায় ধরে। জর্জ এলগার, ক্যামিও, আইডিয়াল ইত্যাদি এ শ্রেণীর জাত।

৪. মিনিয়েচার (Miniature) : এ শ্রেণীর গাছ ছোট, পাতা ছোট এবং ফুল ছোট ছোট হয়। রোজিনা, গোল্ডেন, ইয়ালো ডল ইত্যাদি এ শ্রেণীর জাত।

বংশবিস্তারঃ

কাটিং, গুটিকলম ও ‘টি’ বাডিং এর মাধ্যমে গোলাপের বংশবিস্তার করা হয়। কাটিং ও গুটি কলম জুলাই-আগস্ট মাসে এবং ‘টি’ বাডিং ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে শেষ করতে হয়।

জমি তৈরিঃ

১. সাধারণত চারা রোপণের ২-৩ সপ্তাহ আগে জমিকে গভীরভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝরঝরে ও সমান করে নিতে হবে।

২. এরপর জমিতে ১.২ মিটার চওড়া ও পরিমাণমত লম্বা উঁচু বেড তৈরি করে নিতে হবে।

৩. দু’টি বেডের মাঝখানে পানি নিকাশ ও সেচের জন্য নালা তৈরি করতে হবে।

৪. বেডে গাছ লাগানোর জন্য এক মিটার গভীর এবং ৬০ সে.মি. চওড়া গর্ত করতে হবে।

৫. গর্ত করার সময় ২০ সে.মি. গভীর উপরের মাটি আলাদা করে রেখে বাকি মাটির সাথে ১০ কেজি কম্পোস্ট, আধা কেজি খৈল ও একমুঠো হাড়ের গুঁড়ো মিশিয়ে নিতে হবে।

৬. বাকি উপরের মাটির সাথে প্রয়োজনমত গোবর মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে নিতে হবে।

৭. বড় জাতের গোলাপের জন্য বেশি গোবর সার মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। বড় জাতের গোলাপের জন্য এক গর্ত থেকে অন্য গর্তের দূরত্ব ৬০ সে.মি. এবং ছোট জাতের জন্য ৩০ সে.মি. দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

চারা রোপণঃ

১. নতুন চারা না লাগিয়ে এক বছর পুরানো চারা লাগানো উচিত।

২. গর্তের মধ্যে চারা সোজাভাবে লাগাতে হবে।

৩. চারার শেকড় মাটি দিয়ে সম্পূর্ণ ঢেকে দিতে হবে।

৪. জোড় কলমের মাধ্যমে তৈরি চারার জোড়ের জায়গাটি মাটি থেকে অন্তত ৩-৪ সে.মি. উপরে রাখতে হবে।

সার প্রয়োগঃ

কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে গোলাপ ফুলের গাছে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদির স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা সম্ভব।

সেচঃ

১. চারা রোপণের পর, চারার গোড়ায় প্রাথমিক অবস্থায় ঘন ঘন পানি দিতে হবে।

২. চারা মাটিতে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে নতুন ডালপালা ছাড়ার পর খরা মৌসুমে প্রতি ১০ দিন পর পর একবার সেচ দিলেই চলবে।

৩. প্রতিবার পানি সেচের পর গাছের গোড়ার মাটি ঝরঝরে করে দিতে হবে।

রোগবালাই ও তার প্রতিকারঃ

গোলাপ ফুলের বাগানে পোকার আক্রমণ হলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে।

চাষের সময় পরিচর্যাঃ

১. চারার জোড়া জায়গাটির নিচের অংশ থেকে অর্থাৎ শিকড় গাছ (Root stock) হতে কোন ডালপালা বের হলে ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে দিতে হবে।

২. গাছের প্রথম দিকে বের হওয়া পুষ্পকুঁড়ি ভেঙ্গে দিলে পরবর্তীতে গাছ বড় আকারের ফুল দিবে।

৩. মার্চ-এপ্রিল মাসে পচা গোবর এবং কম্পোস্টের মালচ গাছের গোড়ায় দিতে হবে।

৪. বয়স্ক ডালে ফুল ভালো হয় না। তাই সাধারণত অক্টেবর-নভেম্বর মাসে গোলাপ গাছের ডালপালা ছাঁটাই করতে হবে। ছাঁটাইয়ের সময় মরা ডাল, রোগাক্রান্ত ডালপালা ইত্যাদি ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে ফেলতে হবে।

৫. গাছের বৃদ্ধির উপর নজর রেখে গোলাপ গাছে হালকা, মধ্যম এবং ভারী ছাঁটাই করতে হয়। প্রথম বছরে গাছ ছাঁটাইয়ের কোন প্রয়োজন হয় না।

৬. ছাঁটাইকৃত ডাল যেন শুকিয়ে না যায় তার জন্য ডালের সামনে ছত্রাকনাশক ঘন করে গুলে তুলির সাহায্যে লাগিয়ে দিতে হবে।

৭. ডাল পালা ছাঁটাইয়ের পর গোলাপ গাছের গোড়া থেকে ২০ সে.মি. দূরে গোল করে মাটি খুঁড়ে শেকড়কে বের করে দিতে হবে। ৮-১০ দিন এ অবস্থায় রেখে দিলে শেকড়ে বাতাস ও রোদ লাগবে। এতে গাছের গোড়ায় থাকা ক্ষতিকর পোকামাকড় ধ্বংস হবে।

সাধারণত প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রতি দিন গড়ে প্রায় ৪০০টি ফুল পাওয়া যায় এবং এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে গোলাপ ফুল চাষের জন্য প্রায় ১০০০০ টাকার মত খরচ হয়।

দেশীয় ও বিশ্ব বাজারে ক্রম বর্ধমান ফুলের চাহিদার কারণে গোলাপ চাষ হতে পারে একটি বিকল্প অর্থকরী ফসল।

কৃষককে ক্ষমতায়িত করার বিকল্প নেই.............................

বিজয়ের চল্লিশ বছর পার করেছে বাংলাদেশ। এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে খাদ্য উৎপাদনকে। একাত্তর সালের প্রায় ১০ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে আবাদ হতো প্রায় ১০ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য। যা তৎকালীন সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য যথেষ্ট ছিল না। কিন্তু স্বাধীনতার চার দশকে জমির আয়তন প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেলেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের দারপ্রান্তে। এই বিশাল অর্জনের পেছনে দেশের আপামর কৃষক সাধারণ থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবদান রয়েছে। কিন্তু কৃষির এই বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টায়নি কৃষকের ভাগ্য। গ্রামের প্রান্তিক কৃষক ও নগরের ধনীক শ্রেনীর মধ্যে আয়বৈষম্য বেড়েছে কয়েকগুণ। দেশের আপামর জনসাধারণের খাদ্য গ্রহণের হারও বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, কিন্তু এই সুফল আসেনি দরিদ্র জনগোষ্ঠির ভাগে। এখনও গবেষকদের হিসেবে দেশের ৩০ ভাগ মানুষ রয়েছে দারিদ্রসীমার নীচে। রয়েছে অদৃশ্য দারিদ্রও। সব মিলিয়ে কৃষি ও কৃষকের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির গভীরে যেতে আমরা একই সঙ্গে কথা বলেছি যশোরের বাঘারপাড়ার কৃষক সংগঠক আয়ুব হোসেন ও প্রখ্যাত বিজ্ঞানী আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. জয়নুল আবেদীনের সঙ্গে। কথোপকথনের চুম্বক অংশটি তুলে ধরা হচ্ছে এখানে।
আইয়ুব হোসেন : আমার জন্ম ব্রিটিশ সময়ে। পাকিস্তানের পুরো সময়টিই আমি দেখেছি। দেখেছি দুর্ভিক্ষ ও অভাব। দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে আমি দেখেছি, আমার বাবা বছরের পর বছর ক্ষেতের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তখন প্রায় প্রতি বছর খরায় ধান পুড়ে যেত। সেসময় আমাদের মতো কৃষক পরিবারগুলোতে দুর্ভিক্ষ দেখেছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও দুর্ভিক্ষে অনেক লোককে মারা যেতে দেখেছি। সেসময় মানুষের বেঁচে থাকার যে সংগ্রাম দেখেছি, তা আজও দেখছি। কয়েক বছর আগের সিডর ও আইলার মতে দূর্যোগের কথা যদি বলি, সেসময় খাদ্য সংকটে পড়ে, সারা পৃথিবীতে আমরা খাদ্য খুঁজেছি, কিন্তু কেউ আমাদের দিকে এগিয়ে আসেনি। আমরা বুঝেছি, কারো সহায়তা পাওয়ার দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। যেভাবেই হোক আমাদেরকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েই বাঁচতে হবে। সেই দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার সংগ্রামটি ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের মতোই। উপকুলীয় অঞ্চলগুলিতে যে সংগ্রাম চলছেই।
ড. অমর্ত্য সেন নোবেল পুরস্কার পেলেন এ উপমহাদেশের মানুষ কীভাবে না খেয়ে মারা যাচ্ছে ঠিক সেই বিষয়ের ওপর। তিনি দেখিয়েছেন খাবার আছেÑকিন্তু তার সুষ্ঠু বন্টনের অভাবে মানুষ খেতে পাচ্ছে না। আমাদের দেশে কৃষি উন্নয়নের জন্য উৎকৃষ্ট একটি ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। যা গড়ে তুলেছেন দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বিজ্ঞানীরা। যারা স্বাধীনতার পর থেকেই এদেশের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছেন। তারা একে একে গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন, কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন, সম্প্রসারণ বিভাগ গড়ে তুলেছেন, বিজ্ঞানস্মমত সেচ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন। এর সঙ্গে কৃষকরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে, বেঁচে থাকার সংগ্রামে। এখানে বিজ্ঞানীদের উন্নয়নের সংগ্রাম আর কৃষকদের বাঁচামরার একটি সমন্বয় ঘটেছে। এই যুদ্ধের অন্যতম সেনাপতি হিসেবে এদেশের বড় বড় বিজ্ঞানীদেরকেই আজ অনেক বেশি মূল্যায়ণ করার প্রয়োজন রয়েছে।
আমাদের স্বাধীনতার পর ভিয়েতনাম স্বাধীন হয়। সেদেশের কৃষি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য যাদের অবদান রয়েছে তার মধ্যে আমাদের দেশের কৃতী বিজ্ঞানী ড. কাজী বদরুদ্দোজাও একজন। সেই ভিয়েতনাম এখন বিশ্বের অন্যতম চাল রপ্তানীকারক দেশ। ওরা সশস্ত্র সংগ্রামের ভেতর দিয়ে আসা স্বাধীন জাতি, আমরাও। কিন্তু আমরা আমাদের ঘরে বড় বড় রতœ থাকতেও তাদের মূল্যায়ণ করতে পারিনি, তাদের শ্রেষ্ঠ চিন্তাটি গ্রহণ করতে পারিনি। এটি আমাদের অনেক বড় ব্যর্থতা।
আমাদের দেশে খাদ্যের সুব্যবস্থাপনারও অনেক বেশি ত্রুটি রয়েছে। আমরা কৃষিপণ্যের বহুবিধ ব্যবহারের শিক্ষাটি পাইনি। আলু বেশি উৎপাদন হয়েছে বলে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। সে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। অথচ আমাদের দেশের পশুখাদ্যে তীব্র সংকট রয়েছে। আমরা উৎপাদিত কৃষিপণ্যকে বাছাই করে মানুষ ও কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গবাদি পশুর খাদ্য সমানভাবে ব্যবহার করতে পারি।
সবকিছুর জন্য প্রয়োজন দেশের কৃষককে সংগঠিত করা। কৃষকের কথাবলার প্লাটফরম। যেটি আমাদের দেশে নেই।

ড. জয়নুল আবেদীন : বাংলাদেশের কৃষক দরিদ্র হতে পারে, ক্ষুদ্র হতে পারে, কিন্তু তার ভেতহরেই একটি শক্তি সবসময় রয়ে গেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি অপশাসন থেকে আমরা মুক্ত হই। কিন্তু আমাদের দরিদ্র কৃষকরা দারিদ্র থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যেই সবসময়ই একটা সংগ্রাম করেছে ও করছে। বহু দূর্যোগই আমাদের উপর এসেছে, কিন্তু কোন কিছুতেই এই কৃষকরা হতোদ্যম হয়ে পড়েনি। দ্রুতই নিজেদেরকে আবারো দাঁড় করিয়েছে। একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করতে চাই, যুদ্ধ করতে যেমন অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হয়, আমাদের কৃষকরাও সব যুদ্ধে উত্তীর্ণ হতে পারতেন না, যদি তাদের হাতে সেই অস্ত্রটি না পৌছানো যেত। প্রযুক্তি, উন্নত জ্ঞান ও উৎপাদনের অনুকুল পরিবেশ যদি তার কাছে একেবারেই না থাকতো। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কল্যাণে হেক্টরপ্রতি বেশি বেশি ধান উৎপাদনের কলাকৌশল ও উন্নত জাত কৃষকদের হাতে এসেছে ঠিকই কিন্তু একটি বিষয় সুক্ষভাবে উপলব্ধি করার প্রয়োজন রয়েছে, তা হচ্ছেÑ উৎপাদনটাই মূল বিষয় নয়। কৃষকের লাভ যদি না হয়, তাহলে উৎপাদন দিয়ে কী করবে সে ? বিভিন্ন সরকার সবসময়ই এই কাজটি করার চেষ্টা করেছে। একটি আদর্শ বাজার ব্যবস্থা গড়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা রয়েছে একথা ঠিক, কিন্তু সেচ ব্যবস্থা সুগম করা, সারে ভর্তূকি আরোপ এসব বিষয়গুলো কৃষকের যুদ্ধে সহায়তা করেছে। তবে আত্মসন্তুষ্টির কোন সুযোগ এখানে নেই। আমাদের অনেক কিছু করার ছিল, যা আমরা করতে পারিনি, এটিও মাথায় রাখার প্রয়োজন রয়েছে।
দেশের গড় জাতীয় আয় বেড়েছে, কিন্তু কৃষকের উন্নয়ন হয়নি। খাদ্যের সমবন্টন এখনও অমিমাংসিত একটি বিষয়। সরকার ও আমাদের সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে এমন একটি সেতুবন্ধন প্রয়োজন যার মধ্য দিয়ে দেশের উন্নয়নের সুফল, ধনী দরিদ্র সবার মধ্যে সমানভাবে না হলেও যতটা সম্ভব ভাগ করে দেয়া যায়। এখানে একজন শিল্পপতির আয় যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যে সমাজ থেকে যা গ্রহণ করতে পারছে, একজন কৃষক তা কোনভাবেই পাচ্ছে না।
সামগ্রিক কৃষিতে সমস্যার কলেবর বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বৈরি প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে। নদীগুলোর নাব্যতা কমে যাচ্ছে। বহু নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে, লবণাক্ত পরিবেশের আয়তন বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বিজ্ঞানী, কৃষক সবার জন্যই বর্তমান সময়টি অনেক বেশি কঠিন। এই সময়ে কৃষক, বিজ্ঞানী ও তাদের মধ্যবর্তী অবকাঠামোকে ক্ষমতায়িত করতে হবে। আর এই কাজটি করতে সবচেয়ে আগে সংগঠিত করতে হবে কৃষককে। আর বিজ্ঞানীদেরকে ক্ষমতায়িত করার জন্য সৃষ্টি করতে হবে গবেষণার উন্নত পরিবেশ। তাদের সঠিক জ্ঞান লাভের সুযোগ তৈরি করতে হবে। এদেশের ঋণের টাকায় শিক্ষা অর্জন করা কোন বিজ্ঞানী যাতে স্থায়ীভাবে বিদেশে পাড়ি না জমান, সেই দিকটি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। সবার মধ্যে দেশপ্রেম ও আন্তরিকতার বিষয়টিও এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।